ক্রিকেটে ডাঃ আবদুল মজিদ পরিবারের চার সন্তানের অতুলোনীয় কীর্তি

Badsha-all-2                                                          …দেশীয় ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে ২ভাই-৩ভাই খেলেছেন এমন নজীড় রয়েছে বেশ কটি…আবার ৪ভাই-৫ভাই খেলার দৃষ্টান্তও রয়েছে…তাছাড়া ৭ভাই একই সময়ে বিভিন্ন দলে খেলেছেন সেই অনন্য কীর্তিও রয়েছে  দেশের ক্রিকেটের প্রানকেন্দ্র ঢাকার লীগ ক্রিকেটে…আমাদের ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পেছনে এসব ভাইদের অবদানও ভোলার নয়…ক্রিকেটে একাধিক পরিবারের ভাইদের নানা কীর্তির গল্প কাহিনী থাকলেও ভিন্ন এক অতুলোনীয় রেকর্ডের কারনে সবাইকে ছাপিয়ে বলব আলাদা ভাবেই নিজেদেরে তুলে ধরে স্মরনীয় করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন মরহুম ডাঃ আবদুল মজিদ পরিবারের চার ক্রিকেটার সন্তান…যারা সবাই কিনা জাতীয় পর্যায় তথা ঢাকার ক্রিকেটের অতিচেনা পরিচিত মুখ এবং ক্রিকেটটা খেলেছেন এরা সবাই শীর্ষ পর্যায়েই…এখানে আবদুল মজিদ পরিবারের চার সন্তান খ্যাতনামা ক্রিকেটার চার ভাইয়ের দুর্লভ কীর্তির কথাই তুলে ধরছি…এই চার ভাইরা হলেন আজিম শাহ-জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা-শাহেদ শাহ মুন্না ও নাদির শাহ…এদের মাঝে আজিম শাহ ও মুন্না শাহ ছিলেন মূলত ওপেনিং ব্যাটম্যান এবং বাদশা ও নাদির শাহ ছিলেন পেস ও স্পিন  অলরাউন্ডার…ব্যাটে-বলে সমান দাপটেই ছিলো এদুজনের…যে অতুলোনীয় কীর্তির কারনে এই চার ভাই স্মরনীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন তা হলো দেশের ক্রিকেটের শীর্য পর্যায়ের আসরে এরা সবাই মনমাতানো ব্যাটিং নৈপূন্য প্রদর্শন করে শতরান হাঁকিয়েছেন…অন্যসব পরিবারের ক্রিকেটার ভাইদের মাঝে ২/১ জনের যদিও সেঞ্চুরী রয়েছে তবে সব ভাইরা আবার শতরান হাঁকাতে সক্ষম হননি…যে কারনেই আজিম শাহ-জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা-মুন্না শাহ ও নাদির শাহ নিজেদেরকে তুলে ধরেছেন আলাদা ভাবেই…এ চার ভাইয়ের একই দলে একসাথে খেলাটা যদিও হয়ে ওঠেনি তবে একবার এক সময়ের দেশ সেরা দল গুলোর একটি শক্তিধর আজাদ বয়েজ ক্লাবে বাদশা-মুন্না ও নাদির শাহ এতিনজন একযোগেই খেলেছিলেন…

...১৯৮১ সালে খ্যাতিমান জাতীয় কোচ জালাল ইউনুসের(বসা বামে) গড়া আজাদ বয়েজ ক্লাবে ক্লাবের কলকাতা সফরে জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা-মুন্না শাহ ও নাদির শাহ তিন ভাইকে দেখা যাচ্ছে...

…১৯৮১ সালে খ্যাতিমান জাতীয় কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর (বসা বামে) গড়া আজাদ বয়েজ  ক্লাবের ভারতের কলকাতা সফরে জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা-মুন্না শাহ ও নাদির শাহ তিন ভাইকে দেখা যাচ্ছে…

                                               …এতিনজনই জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন এবং বড় মাপের ক্রিকেটারই ছিলেন…জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা ছিলেন ’৭০-৮০ দশকে দেশ সেরা অলরাউন্ডার…বাদশাকে আমাদের ক্রিকেটের এযাবৎকালের সবচেয়ে মেধা সম্পন্ন দক্ষ পেস বোলিং অলরাউন্ডার বল্লে মোটেও ভুল বলা হবেনা…দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলে গেছেন সুনামের সাথেই…বাদশাই প্রথম ‘৮৬ সালে পাক বিশ্বখ্যাত স্পিনার আবদুল কাদিরের সাহায্যার্থে  কুয়েতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যকার ২টি প্রদর্শনী ম্যাচেই বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করেছিলেন…বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলতে নেমে সে ম্যাচে বল হাতে দুর্দান্ত ভাবে জ্বলে ওঠেছিলেন বাদশা…চোঁখ ধাধানো বোলিং করে বাদশা রীতিমত তাক লাগিয়ে ছেড়েছিলেন…দ্বিতীয় খেলায় ৭ওভার বল করে ১মেডেন নিয়ে মাত্র ১৬ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন মূল্যবান ৩উইকেট…সেদিন মাঠের সবাইকে হতবাক করে বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াদাদ ও সেলিম মালিককে ০রানে ও মহসীন খানকে ৮ রানের মাথায় প্যাভেলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছিলেন কুশলী চৌকস ক্রিকেটার বাদশা…সে সময়ের পাক বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার গ্রেট মিয়াদাদ তো বাদশার বোলিং দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে খেলা শেষে তিনি একটি ব্যাট ও নগদ দুশো ডলার বাদশাকে উপহারও দিয়েছিলেন…

...বামে ‘৮৬ সালে খ্যাতিমান কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর প্রশিক্ষনে গড়া জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শিপিং করর্পোরেশন দলে নাদির শাহ দাঁড়ানো বামে ও বাদশা ডানের তৃতীয়--ডানে ‘৮৪র দক্ষিন এশিয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলে বাদশা সামনের সারিতে দাঁড়ানো বামের দ্বিতীয়...

…বামে ‘৮৬ সালে খ্যাতিমান কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর প্রশিক্ষনে গড়া জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শিপিং করর্পোরেশন দলে নাদির শাহ দাঁড়ানো বামে ও বাদশা ডানের তৃতীয়–ডানে ‘৮৪র দক্ষিন এশিয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলে বাদশা সামনের সারিতে দাঁড়ানো বামের দ্বিতীয়…

                                                                …বাদশা ঢাকা লীগে আবাহনী-আজাদ বয়েজ-বিমান-ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৪টি বড় দলের হয়ে খেলে গেছেন লম্বা সময় ধরে দাপট আর সুনামের সাথেই…এবং নিয়েছেন বহুবার লীগ ও নানা ট্রফ্রি জয়ের স্বাদ…জাতীয় ক্রিকেট আসরেও খেলেছেন নানা সময়ে ফরিদপুর-বিমান-চট্টগ্রাম জেলার হয়ে এবং এই তিন দলই তার সময়ে জয় করে  নিয়েছিলো জাতীয় ক্রিকেটের আসরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি…এছাড়াও বাদশা মাঝে একবার প্রখ্যাত কোচ জালাল ইউনুসের তত্বাবধানে গড়া শিপিং করর্পোরেশন দলের হয়ে খেলেও নিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেটে শিরোপা জয়ের স্বাদ…দেশের ক্রিকেটে অতুলোনীয় ব্যাটে-বলে নৈপূনের সাক্ষর রাখার জন্য সরকার বাদশাকে রাষ্টীয় পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিতও করেছে…যা ছিলো মজিদ পরিবারের বড় গর্বের বিষয়…এছাড়াও বাদশা ভিন্ন সময়ে পেয়েছেন ক্রীড়া লেখক সমিতি ও ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা প্রদত্ত সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার…’৭৩ সালে বাদশা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্লু খেতাবও লাভ করেছিলেন…

badsha gong-azim sha

…১৯৮৪ সালে শক্তিশালী আবাহনীর বিরুদ্ধে মন মাতানো শতরান হাঁকিয়েছিলেন ধানমন্ডির হয়ে খেলা আজিম শাহ…

                                                             …উল্লেখিত চার ভাইয়ের মাঝে বড় ভাইটি হলেন আজিম শাহ…ওপেনিং ব্যাটসম্যান আজিম শাহ ধানমন্ডি ক্লাবেই বেশী সময় ধরে খেলে গেছেন…দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে বেশ কিছু খেলায় দলকে জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিতে ভূমিকাও রেখেছেন…সত্তর দশকে ছোট ভাই মুন্নাকে নিয়ে ধানমন্ডি ক্লাবের ব্যাটিং গোড়াপত্তনও করেছেন এক সাথে…’৮৪সালে ধানমন্ডির হয়ে শক্তিশালী দল আবাহনীর বিরুদ্ধে তার মনকাড়া শতরানটি আলাদা ভাবে তুলে ধরতে হয়…সে ম্যাচে আবাহনীর বিরুদ্ধে ১৭৩ মিনিট ব্যাট করে ৯চারের সাহায্যে আজিম তার শতরানটি করেছিলেন…তবে তার দল ধানমন্ডি সেদিন হেরে গিয়েছিলো মাত্র ৯রানে…

Badsha gong-BADSHA

…’৮৫ সালে বিমানের খ্যাতিমান ক্রিকেটার অলরাউন্ডার বাদশা ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে দৃষ্টিনন্দন শতরানটি করেছিলেন…

                                                                 …শাহেদ শাহ মুন্না ছিলেন মূলতঃ একজন নির্ভরযোগ্য ওপেনিং ব্যাটসম্যান…পাশাপাশি স্পিন বোলিংটাও করতেন ভাল…ধানমন্ডির হয়ে লীগ জীবন শুরুর পর লম্বা সময় ধরে দাপটে খেলে গেছেন আজাদ বয়েজ ক্লাবের পক্ষে…ঢাকার লীগ ক্রিকেটে নানা মরসুমে হাঁকিয়েছেন একাধিক মনকাড়া সেঞ্চুরী…মুন্না শাহ জাতীয় দলের ট্রায়ালে বরাবরই ছিলেন তবে দলে ঠাই পাওয়া আর হয়ে ওঠেনি…তবে সত্তর-আশি দশক সময়টায় বাংলাদেশ সফরে আসা এমসিসি-শ্রীলংকা সহ অনান্য বিদেশী দলের বিরুদ্ধে বিসিবি একাদশ বা জোনাল দলের হয়ে নিয়মিতই খেলেছিলেন…মুন্না জাতীয় ক্রিকেট আসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলে এবং আজাদ বয়েজের হয়ে খেলে নানা আসরে চ্যাম্পিয়নের স্বাদও নিয়েছিলেন…

Badsha-munna

…কুশলী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মুন্না শাহ লীগে একাধিক শতরান হাঁকিয়েছিলেন…এখানে ‘৭৬ ও  ‘৭৭ মরসুমে জিমখানার বিরুদ্ধে করা মুন্নার দুটো চমকপ্রদ সেঞ্চুরীর চিত্র তুলে ধরা হলো…

badsha-munna4-

…বামে ১৯৭৮ সালে সফরকারী শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের মাঠে সেন্ট্রাল জোনের হয়ে রকিবুল হাসানের সাথে ব্যাট করতে নামছেন মুন্না শাহ–ডানে সেন্ট্রাল জোনের দলের মাঝে মুন্না শাহ বসা বামে…

                                                                        …কৃতি স্পিন অলরাউন্ডার নাদির শাহ দীর্ঘদিন ঢাকা লীগ ও জাতীয় ক্রিকেট আসরে খেলে গেছেন নিজ সুনামের সাথে…নাদির শাহ ব্যাট ও বল হাতে দুটোতেই ছিলেন সমান দক্ষ ও নির্ভরশীল…নানা সময়ে অনেক ম্যাচ জয়ী মনমাতানো অলরাউন্ড পারফরমেন্স রেখে গেছেন নাদির…বাংলাদেশ দলে একাধিকবার ট্রায়ালে ডাক পেলেও জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগটা আর তার পাওয়া হয়নি…তবে আশি দশকে দেশের মাটিতে সফরকারী পাক ওমরকোরেশী দল,ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এমসিসি দলের বিরুদ্ধে খেলেছেন বেশ কিছু ম্যাচ…

Badsha-nadir2

…১৯৮৫ সালে জাতীয় ক্রিকেট আসরে তারকা চৌকস ক্রিকেটার নাদির শাহ ঢাকা জেলার হয়ে খেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ব্যাটিং নৈপূন্য উপহার দিয়ে অপরাজিত শতরান করে মন কাড়েন…

                                                                …নাদির শাহ ঢাকা লীগে নানা সময়ে খেলেছেন মোহামেডান-আবাহনী-আজাদবয়েজ-ধানমন্ডি-ভিক্টোরিয়া-বিমান-সূর্যতরুন-ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও কলাবাগানের ক্লাবের হয়ে…বিশেষ করে মোহামেডান,আবাহনী,বিমান,আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলে বিভিন্ন মরসুমে ট্রফি জয়ের স্বাদ নিয়েছেন একাধিকবার…তার সময়ে ’৭৯ সালে মোহামেডান ও ‘৮৪ মরসুমে আবাহনী ক্রিকেট লীগ শিরোপা জয় করেছিলো…এছাড়াও নাদির ‘৮৬তে একবার শেরেবাংলা কাপ ট্রফিতে বিসিবি একাদশে খেলেও ট্রফি জয়ের স্বাদ নিয়েছিলেন…নাদির শাহ জাতীয় ক্রিকেট আসরে নানা সময়ে খেলেছেন ঢাকা-পাবনা-সিলেট ও শিপিং করর্পোরেশন দলের হয়ে…এর মাঝে নাদির শাহর দল সিলেট ‘৮২তে  এবং ‘৮৬তে শিপিং করর্পোরেশন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয় করেছিলো…খেলা ছেড়ে আম্পায়ারিং পেশায় নেমেও নাদির শাহ বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন…নিজেকে দেশ সেরা আম্পায়ারদের একজন হিসেবেও করেছেন প্রতিষ্ঠিত…একাধিক ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনাও করেছেন সুনামের সাথে…

Badsha-nadir -79-81-

…বামে ১৯৭৯ সালের ক্রিকেট  লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান দলে নাদির শাহ বসা বামের তৃতীয়–ডানে ‘৮১র দামাল সামার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন আবাহনী দলে নাদির শাহ দাঁড়ানো ডানের চতুর্থ…

 

No comments.

Leave a Reply