ঢাকার লীগ ক্রিকেটে আবদুল হালিম পরিবারের ৭ভাই খেলার বিরল কীর্তি
…ভাবতেই অবাক লাগে দেশের ক্রিকেটের প্রানকেন্দ্র ঢাকা লীগ ক্রিকেট আসরে একই পরিবারের রেকর্ড পরিমান সর্বাধিক সাত সন্তান খেলেছেন…বিস্ময় জাগালেও সত্য…সত্তর দশকে ওয়াপদায় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মরহুম আবদুল হালিম…বকশিবাজারস্থ নবকুমার ইনস্টিটিউশন স্কুলটার পাশেই ছিলো তার বসবাস…আর সেই হালিম পরিবারেরই ৭ছেলে সেই অভাবনীয় কীর্তিটি স্থাপন করেছেন…যে অনন্য কীতির নজীড় ভাঙ্গবার মত নয় বলাই যায়…দুর্লভ রেকর্ড গড়া সেই ৭ ভাই হলেন যথাক্রমে টুলটুল-কমল-জিল্লুর-শ্যামল-সেলিম-টিটু ও পিকলু…এদের মাঝে ৬ ভাই খেলেছেন সিনিয়র ডিভিশন প্রথম বিভাগ লীগ আসরে…একমাত্র কমল খেলেছেন দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগে…৭ ভাইয়ের মাঝে কমল ও সেলিমই ছিলেন পেস বোলার…বাকি ভাইরা ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান তবে স্পিন বোলিংটাও করতেন বেশ ভাল…একমাত্র জিল্লুর ক্রিকেটের পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলেছেন শীর্ষ পর্যায়ে…বেশ সুনামও কুড়িয়েছিলেন…জাতীয় বাস্কেটবল দলেও সুযোগ লাভ করেছিলেন জিল্লুর…পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক ব্লু খেতাবও…এই সাত ভাইয়ের মাঝে সেলিম-শ্যামল-টিটু ও পিকলু জাতীয় ক্রিকেট আসরেও খেলেছেন নিজ সুনামের সাথে…এমুহূর্তে সেলিম কানাডায় ও টিটু ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন যাবৎ…আর ভাইদের মাঝে সবার বড় টুটুল চিরবিদায় নিয়ে না ফেরার ভূবনে চলে গেছেন বেশ কবছর হলো…মজার ব্যাপার হলো হালিম পরিবারের খেলা পাগল এই ৭সন্তানের পরের জেনারেশনের কেউই আর খেলার জগতে নিজেদের জড়াননি তেমন ভাবে…
…এই ৭ ভাইয়ের মাঝে বলতে হয় স্পিন অলরাউন্ডার টিটু যেন নাম কুড়িয়েছিলেন বেশী…সেই ’৮৫ মরসুমে দীর্ঘকায় চৌকস অলরাউন্ডার টিটু ৫৮৭ রানের পাশাপাশি ২৬ উইকেট দখল করে লীগের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হয়ে নিজেকে আলাদা ভাবেই তুলে ধরে নজড় কেড়েছিলেন সবার…টিটু ‘৮৮-৮৯ মরসুমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয় কাপ ক্রিকেট সহ বেশ কবারই বাংলাদেশ দলের ট্রায়ালেও ডাক পেয়েছিলেন…সাইফুল আজম টিটু ছিলেন ডানহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি অফ ব্রেক বোলার…টিটু মাঝে মাঝে দলের প্রয়োজনে উইকেট কীপারের দায়িত্বটাও পালন করেছেন…দ্বিতীয় বিভাগে ৩বছর খেলে টিটু ১৯৭৯-৮০ তে ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলাটা শুরু করে ১৯৯৩-৯৪ পর্যন্ত নিয়মিত নানা দলে খেলে গেছেন…জাতীয় ভিত্তিক অনুর্দ্ধ ১৮ টুর্নামেন্টে টিটু ঢাকা বোর্ডের নেতৃত্বও দিয়েছেন…প্রথম সিরাজ স্মৃতি কলেজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টিটুর দল জগন্নাথ কলেজ পুরো বাংলাদেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলো…টিটু সে সময় জগন্নাথ কলেজ দলের অধিনায়কত্বও করেছেন…ঢাকার হয়ে জাতীয় ক্রিকেটও খেলেছেন টিটু সুনামের সাথেই…বলতেই হয় মাঠের পারফরমেন্সের বিবেচনায় টিটু তাঁর সেরা সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অলরাউন্ডাদেরই একজন ছিলেন…টিটু তার খেলোয়াড়ী সাধারণ বীমা, অ্যাজাক্স দলের অধিনায়কত্বও করেছেন…লম্বা সময়ে ঘুরে ফিরে টিটু ঈগলেটস, সূর্য তরুণ, রূপালী ব্যাংক, ওয়ারী এবং উদিতির হয়ে খেলে গেছেন দক্ষতা ও নৈপূন্যের সাক্ষর রেখেই…টিটু ক্রিকেটের পাশে এক সময় কবছর পাইওনিয়ার ডিভিশন ফুটবলেও কৃতিত্বের সাথে খেলেছেন।
…আবদুল হালিম পরিবারের তৃতীয় ছেলে তাহির-উজ-জামিল জিল্লুর ক্রিকেটে দক্ষতার সাক্ষর রাখলেও বাস্কেটবলটা খেলতেন আবার শীর্ষ পর্যায়ে…জাতীয় বাস্কেটবল দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন…এমনকি জিল্লুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের সাথে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে এক সাথে বাস্কেটবল লীগও খেলেছেন…জিল্লুর ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে ঈগলেটস এর হয়ে ১৯৭৫ থেকে ’৮৪ পর্যন্ত একটানা খেলে গেছেন নৈপূন্য প্রদর্শনের মাঝে সুনামের সাথে…তিনি ছিলেন ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং ডান হাতি স্লো অফব্রেক বোলার…লীগে জিল্লুরের সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংসটি ছিল ঐতিহ্যধর শক্তিশালী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে…ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে ১৬ রানে ৫ উইকেট দখল ছিলো জিল্লুরের সেরা বোলিং কীর্তি…টানা দীর্ঘ বছর জিল্লুর বাস্কেটবল লীগ খেলেছেন নানা সময়ে মোহামেডান-ওয়ান্ডারার্স-ব্রাদার্স ইউইনয়ন-শান্তিনগর ক্লাবের হয়ে…তাছাড়া জাতীয় বাস্কেটবল আসরে বেশকবছর দাপটে খেলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা জেলা ও ঢাকা মেট্রোপলিস দলের হয়ে…বাস্কেটবলে অসাধারন সফলতার জন্য জিল্লুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে ব্লু সম্মাননা প্রদান করে সম্মানিত করা হয়…যে সম্মানটা ছিলো জিল্লুরের খেলোযাড়ী জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া ও সেই সাথে গর্বের…
…হালিম পরিবারের বড় ছেলে মরহুম হাবিব আজিম রহমতুল্লাহ টুলটুল (১৯৪৯-১৯৯৬) ছিলেন ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং অকেশনাল ডানহাতি অফ ব্রেক বোলার… টুলটুল স্বাধীনতার পূর্বে তদানীন্তন ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে কয়েকবছর খেলেছিলেন কৃতিত্বের সাথে…সেই সময় তাঁর সহ খেলোয়াড়ের মধ্যে পরিচিত মুখ ছিলেন পরবর্তীতে ক্রীড়া সাংবাদিকতায় খ্যাতি অর্জনকারী দৈনিকবাংলার ক্রীড়া সম্পাদক কামরুজ্জামান-ক্রীড়াজগত সম্পাদক আতাউল হক মল্লিক এবং আবাহনীর খ্যাতিমান ক্রিকেটার দলনায়ক অলিউল ইসলাম সহ প্রমূখ…ক্রিকেটের পাশাপাশি একটা সময় টুলটুল আগ্রহভরে ব্যান্ড সংগীতের চর্চাটাও করতেন…তার ব্যান্ডটির নাম ছিল “Time Ago Motion” …স্বাধীনতার পরে আর ব্যান্ডটির কর্মকান্ড ধরে রাখা হয়নি…টুলটুল ছিলেন সেই ব্যান্ডের ড্রামার…
…আবদুল হালিম পরিবারের দ্বিতীয় ছেলে গাউসেল আজম রহমতুল্লাহ কমল ১৯৭৪ সাল থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগে নানা সময়ে সিন্থিয়া, ঈগলেটস বি এবং রেন্জার্স ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন…কমল ছিলেন ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার…ক্রিকেটের পাশাপাশি কমল ঢাকার দাবা লীগ সহ জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশগ্রহণ করেছেন বেশ কয়েকবছর…
…আবদুল হালিম পরিবারের চতুর্থ ছেলে জাহিদ আজম শ্যামল ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগ আসর দিয়ে ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিলেন…এরপর ১৯৮০-৮১ মরসুম থেকে একটানা ‘৮৯ সাল অবধি ঢাকা প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলে গেছেন নৈপূন্যের সাথে…শ্যামল ১৯৮৪-৮৫ এবং ১৯৮৫-৮৬ মরসুমে জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপে ঢাকা জেলা দলের হয়ে খেলেছেন নিজ সুনামের সাথেই…তিনি ছিলেন ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি অফ ব্রেক বোলার…চমৎকার অলরাউন্ড পারফরমেন্সের সাক্ষর রেখে শ্যামল বরাবরই লীগ শেষে শীর্ষ অলরাউন্ডারের তালিকায় থেকেছেন…শ্যামল প্রথম বিভাগ লীগে নানা সময়ে খেলেছিলেন ঈগলেটস, শান্তিনগর, ধানমন্ডি ও আজাদ বয়েজ ক্লাবের পক্ষে…
…আবদুল হালিম পরিবারের পঞ্চম ছেলে সেলিম আজম রহমতুল্লাহ সেলিম ১৯৭৬-৭৭ মরসুমে ফরিদাবাদ ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ২য় বিভাগে খেলা শুরু করেছিলেন…এরপর ১৯৭৮-৭৯ তে গিয়ে সেলিম ঈগলেটস ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ আসরে খেলা শুরু করেন…সেলিম পরবর্তীতে সূর্যতরুণ ক্লাবের হয়ে হয়ে কবছর খেলে সবশেষে ব্রাদার্সের পক্ষে খেলে ’৯২ সালে ক্রিকেট খেলার পরিসমাপ্তি টেনেছিলেন…সেলিম ছিলেন মূলত ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার…ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের পক্ষে নিয়মিত নৈপূন্যের সাথে খেলে সেলিম প্রথমবারের মত লীগ শিরোপা জয়ের স্বাদও নিয়েছিলেন…সেই সময়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন খেলোয়াড় ভারতের রমন লাম্বা, শ্রীলংকার অশোকা ডি সিলভা, রমেশ কালুভিতারানা, দেশীয় বড় তারকা জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ, ইউসুফ রহমান বাবু, আতহার আলী খান, আকরাম খানের মত খ্যাতিমান ক্রিকেটাররা খেলেছিলেন…সেলিম ক্রিকেটের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর প্রথম বিভাগ বাস্কেটবল লীগেও খেলেছেন…সেলিম জাতীয় ক্রিকেট আসরে খেলেছেন ঢাকা জেলার হয়ে বেশ কবছর…
Shafiul Azam Piklu
May 17. 2020
আমার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা আমি তাঁদের ভাই। লেখাসমেত তাঁদের পাশে আমার নাম এবং ছবি থাকার অন্য কারণগুলো খুব যুৎসই নয় বলে খুবই কুন্ঠিত বোধ করছি। লিখায় আমার অংশটুকু অসত্য নয় কিন্তু পারফর্মেন্সের মাণ অনুযায়ী বড়ভাইদের পাশে জায়গা পাওয়ার মত একেবারেই নয়!