স্মৃতির পাঁতায় চট্টলার ক্রীড়াঙ্গনের অতিচেনা জনপ্রিয় ফুটবল ব্যক্তিত্ব নজরুল ইসলাম লেদু
…চট্টলার ক্রীড়াঙ্গনের অতিচেনা জনপ্রিয় এক ফুটবল ব্যক্তিত্ব নজরুল ইসলাম লেদু…খেলোয়াড়-কোচ-সংগঠক ফুটবলের এই তিন ভূবনেই ছিলো তার দীপ্ত পদচারনা…একটা সময় সত্তর দশকের শেষ দিকে ঢাকা ও চট্রগ্রাম ফুটবল লীগ আসরে খেলে মাঠ মাতিয়েছেন আক্রমনভাগের কুশলী উইঙ্গার নজরুল ইসলাম লেদু…চট্রগ্রাম জেলা দলেও খেলেছিলেন নিজ সুনামের সাথে…খেলা ছেড়ে কোচিং পেশায় ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে দক্ষতা ও সফলতায় বেশ সুনাম-খ্যাতি কুড়িয়েছেন…এবং সাফল্যের মুখ দেখে নিজেকে আলাদা ভাবেই করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত…নজরুল ইসলাম লেদু ‘৯৩ সালে মায়ানমারের রেঙ্গুন হতে উচ্চতর কোসেস ট্রেনিং নেয়া ছাড়াও ঢাকায় কয়েকবার অলিম্পিক সলিডারিটি কোচেস ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন…বিশেষ কোচেস ট্রেনিং গ্রহনের মাঝেই কোচিংটাকে সিরিয়াসলী নিয়েছিলেন…তার প্রশিক্ষনেই চট্টলা লীগে সাদা কালোর ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান একবার হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়নের স্বাদও নিয়েছিলো…ওদিকে দেশের ফুটবলের প্রান কেন্দ্র ঢাকার প্রথম বিভাগ লীগ আসরে প্রথম বারের মত ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবকে কোচিং করিয়েই দলকে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ এনে দিয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনে তুলে দারুন কীর্তি গড়েছিলেন…বর্তমান সময়ে চট্রগ্রাম লীগে মোহামেডান ব্লুজের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সফল কোচ নজরুল ইসলাম লেদু…
…চট্রগ্রাম ফুটবলে একটা সময় ব্রাদার্স ইউনিয়ন দল গঠন ও লীগে চমক জাগানো নৈপূন্য প্রদর্শনের মাঝে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পেছনেও অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিলেন কোচ নজরুল ইসলাম লেদু…বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবটির নাম পরিবর্তন করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব প্রতিষ্ঠাতার সময়কালে নজরুল ইসলাম লেদু একাধারে দলটার প্রশিক্ষক ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন…সে সময় ব্রদার্সের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন আজকের চট্টলার মেয়র আ.জ.ম.নাসির…চট্রগ্রাম লীগে নানা সময়ে বড় দল গুলো সহ একাধিক ক্লাবকে প্রশিক্ষন দিয়েছেন কোচ নজরুল ইসলাম লেদু…ছিলেন চট্রগ্রাম জেলা দলেরও কোচ…সফল কোচ লেদু একবার চট্রগ্রাম আবাহনীকে ঢাকার প্রিমিয়ার লীগে উঠিয়ে ভাল অবস্থানে দাড় করিয়ে তাক লাগিয়েছিলেন…তাছাড়া বাংলাদেশ গেমসে চট্রগ্রাম বিভাগকে একবার চ্যাম্পিয়ন করিয়েও চমক দেখিয়েছিলেন…কোটি টাকার সুপার কাপে কোচ লেদু তার চট্টলা মোহমেডান দলকে সেমি ফাইনালে তুলে নিয়ে বড় রকমের চমকটি দেখিয়েছিলেন…সেবার ঢাকা মোহামেডানের কাছে ট্রাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিলো কোচ লেদুর প্রশিক্ষনে গড়া দলটি…কোচ লেদুর প্রশিক্ষনে গড়া অনেক ফুটবলারই এক সময় হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত…একটানা তিন দশকেরও লম্বা সময় ধরে চট্রগ্রাম ফুটবলের পেছনে খেলাটা ছেড়ে কোচ ও সংগঠক হিসেবে নজরুল ইসলাম লেদু যে অবদান রেখেছেন তা ভুলবার মত নয়…আর তাই বলাই যায় চট্রলা ফুটবলের ইতিহাস লিখতে গেলে নজরুল ইসলাম লেদুর নামটা আলাদা ভাবেই লেখা থাকবে…আর থাকবেন স্মরনীয় হয়ে নিঃসন্দেহে…
…নজরুল ইসলাম লেদুর ফুটবল লীগ জীবন শুরুটা ছিলো ১৯৭৩ সালে…সেবার পাড়ার ক্লাব দর্পন দলের হয়ে খেলেছিলেন চট্রগ্রাম ২য় বিভাগ ফুটবল আসরে…বাবার আকস্মিক মৃত্যুর কারনে পরের বছর আর খেলা হয়নি…এরপর ‘৭৫ সালে পুনরায় দ্বিতীয় বিভাগ লীগ খেলেন আগ্রাবাদ কমরেড ক্লাবের হয়ে…পরের বছরই তার ফুটবল শিক্ষা গুরু প্রখ্যাত কোচ আবদুস শুক্কুরের কল্যানে প্রথম বিভাগে খেলার সুযোগ পান টিএসপি ক্লাবে…অতঃপর ‘৭৯ সাল হতে ‘৮৬ সাল অবধি টানা খেলে যান চট্রগ্রাম পৌড়সভা ক্লাবের জার্সী গায়ে জড়িয়ে…’৮৩তে বড় ধরনের ইনজুড়িতে পড়ে বলা যায় লেদুর ফুটবল জীবনটাই অনেকটা থেমে যায়…সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরলেও আগের ফর্মে আর খেলা হয়ে ওঠেনি আঘাতের ভীতিটা কাজ করায়…অতঃপর অনেকটা অনিয়মিত ভাবে পৌড়সভা দলের হয়ে চট্রগ্রাম লীগ ফুটবল খেলে ‘৮৬ সালেই খেলা থেকে বিদায় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ফুটবলার নজরুল ইসলাম লেদু…
…ঢাকা লীগে নজরুল ইসলাম লেদু প্রথম খেলেছিলেন ‘৭৯ সালে…ও সময় আজাদেই খেলতেন চট্টলার ৩ ফুটবলার গোলকিপার খোকন-নিত্য ও বাবুল দেব…চট্রগ্রাম জেলা দলের হয়ে প্রথমবারের মত ’৭৯-র শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল খেলতে যাবারক্ষনেই সিনিয়র খেলোয়াড় খোকন বলে রেখেছিলেন আজাদে খেলবার কথা…বলে দিয়েছিলেন ঢাকার অন্য কোন ক্লাব কর্তার সাথে যেন কথা বলা না হয় খেলার ব্যাপারে…গোলকিপার খোকনের কথামতই জাতীয় ফুটবল খেলা শেষে ঢাকায় যাওয়া হয় এবং সেই শুরু আজাদের হয়ে ঢাকা লীগ খেলা…খেলেছিলেন ‘৮২সাল অবধি…নজরুল ইসলাম লেদু নিজ জেলা চট্রগ্রাম দলের হয়ে শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল আসরে খেলেছেন ‘৭৯ সাল হতে ‘৮২সাল অবধি…তারপর তো সেই ইনজুড়িতেই ছিটকে পড়েন খেলা থেকে…
…ফুটবল খেলাটা ছাড়লেও ফুটবলকে ছাড়তে পারেননি খেলা পাগল নজরুল ইসলাম লেদু …তাইত একটা সময় ‘৮৭ সালে ঢাকায় অলিম্পিক সলিডারিটি কোচেস ট্রেনিং গ্রহন করে মন প্রান উজার করে দিয়ে সিরিয়াসলী কোচিং জীবন শুরু করেন…নিজ এলাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে বল নিয়ে নাড়াচাড়া করার মাঝেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন দ্বিতীয় বিভাগের দল বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের ট্রেনার হিসেবে…এক পর্যায়ে নজরুল ইসলাম লেদু ‘৯৩ সালে মায়ানমারের রেঙ্গুন হতে উচ্চতর কোসেস ট্রেনিং নেয়া ছাড়াও ঢাকায় কয়েকবার অলিম্পিক সলিডারিটি কোচেস ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেয়া শেষে পুরোদমে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ভালভাবেই…এক সময় কোচ হিসেবে ঢাকা ও চট্রগ্রাম ফুটবলে বড় সাফ্যলের মুখ দেখার মাঝে নিজেকে কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সুনামও কুড়িয়েছেন অনেক…
…তিন দশকেরও দীর্ঘ সময়ের কোচিং জীবনে নজরুল ইসলাম লেদু চট্রগ্রাম ফুটবল লীগ আসরে বড় সব দলকেই যেন কোচিং করিয়েছেন…সাদা কালোর ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব,আবাহনী ক্রীড়া চক্র,ব্রাদার্স ইউইনয়ন ক্লাব,বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র,রাইজিং স্টার ক্লাব, পৌড়সভা একাদশ,কোয়েলিটি স্পোর্টস,ওয়ারী ক্লাবকে প্রশিক্ষন দিয়েছেন…অপরদিকে ঢাকার ফুটবলে ফকিরেরপুল ইয়ং মেন্স ক্লাবকেও কোচিং করিয়েছেন…কোচ নজরুল ইসলাম লেদু চট্রগ্রাম জেলা দলের প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন একাধিকবার…ছিলেন চট্রগ্রাম বিভাগীয় দলের কোচ…
…কোচ নজরুল ইসলাম লেদুর কোচিং জীবনের উল্লেখ যোগ্য সফলতার মাঝে আলাদা ভাবে তুলে ধরার মত সাফল্য গুলো হচ্ছে চট্রগ্রাম লীগে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২০০৩ হতে ২০০৫ সাল টানা তিনবার লীগ শিরোপা এনে দিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নশীপের অনন্য কীর্তি স্থাপন, চট্রগ্রাম বিভাগ দলকে ২০০২ সালের বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়ের স্বাদ এনে দেয়া, ঢাকা লীগে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের কর্নধার মনজুর হোসেন মালুর কল্যানে প্রথমবারের মত কোচিং করানোর সুযোগ লাভের মাঝেই দলটাকে প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে প্রিমিয়ার লীগে তুলে আনা,একই ভাবে চট্রগ্রাম আবাহনীকে ঢাকার চ্যাম্পিয়নশীপ লীগে শিরোপা জয়ের মাঝে প্রিমিয়ারে টেনে তোলা,চট্রগ্রাম মোহামেডানকে প্রথম কোটি টাকার সুপার কাপে সেমি ফাইনালে নিয়ে যাওয়া…
…কোচ নজরুল ইসলাম লেদু কোচিং জীবনের পাশাপাশি চট্রগ্রামে সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও নানা ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন দীর্ঘ প্রায় তিন দশক সময় ধরে…ছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবটি প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারন সম্পাদক…এমুহূর্তে নজরুল ইসলাম লেদু চটগাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারী দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও চট্রগ্রাম বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন…পাশাপাশি নজরুল ইসলাম লেদু একযোগে চট্রগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন…এর বাইরে নজরুল ইসলাম লেদু হলেন লিটল ব্রাদার্স ক্লাবের সভাপতি…
Recent Comments