মনে পড়ে অবহেলিত ক্রিকেটের সেই দুর্দিনের দিন গুলোর কথা
…একটা সময় ছিলো যখন ক্রিকেটাররা সিমেন্টের পাকা উইকেটে ক্লাবের অনুশীলনে ঘাম ঝড়াতেন দিনের পর দিন…পরে কিনা ম্যাটিং উইকেটে লীগ ম্যাচ খেলায় নেমে পড়তেন…তবে কিছু ম্যাচ হত মূল স্টেডিয়ামে ঘাসের উইকেটে…এমন দিনের মাঝে সেসময়টায় বিদেশী দল গুলো এলে তাদের বিরুদ্ধে খেলতে হত নামে মাত্র ঘাসের উইকেটে…ছিলোনা জিম বা সুইমিং পুলের সুযোগ সুবিধা…ছিলোনা ফিজিও হতে শুরু করে বিদেশী কোচের সমাহার…ছিলোনা কম্পিউটারের মনিটরে বিদেশী দলের খেলা দেখে ওদের কাবু করার পরিকল্পনা হাতে নেবার সুযোগ…ছিলো না বোলিং বা ব্যাটিং মেশিন…ছিলোনা টাকাকরি…এমনকি লীগ ম্যাচ খেলাও হয়েছে অনেক দলের অদল বদল করে একটা ভাল ব্যাট দিয়ে…ম্যাচের বল কেনা ও বিরতিতে লাঞ্চের খাবারের টাকা যোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হত দল গুলোর কর্তাদের… …গল্প নয় সত্য একটা সময় জল পানের বিরতিতে মাঠে পানি নিয়ে যাওয়া হত টিনের বাল্টি করে…বিদেশী দলের খেলায় ব্যাবহার করাও হয়েছে ড্রিন্কস সরবরাহের জন্য রিকশাভ্যান…একটা সময় ছিলো মাত্র দুরুমের অফিসই ছিলো ক্রিকেট বোর্ডের কর্মস্থল…দুর্দিনে ফুটবল ফেডারেশনের দিকেও কিনা হাত বাড়াতে হত সামান্য কিছু টাকাকড়ির জন্য…আবাহনী মাঠে ক্লাব ও বোর্ডের বড় কর্তারা খেলা উপভোগ করতেন খোলা আকাশের নীচে টুলে বসে…স্কোরারও খেলার সময়টায় কাজ করে যেতেন সেই একই ভাবে খোলা আকাশের নীচে মাঠের এক পাশে…এমন একদিন ছিলো যখন টিভিতে দেশের ক্রিকেট খেলা দেখার দিকটা স্বপ্নেও যেন ভাবার মত ছিলোনা…রেডিওতে ধারা বিবরনী দেয়ার সূচনাটা ছিলো সেই ‘৭৫ সালে…ছিলোনা সে সময় তুলে ধরার মত কোন প্রেস বক্স…একটা সময় খোলা আউটার স্টেডিয়ামেই ক্রিকেট লীগের ৩টা ম্যাচও চলত পাশাপাশি…মনে পড়ে প্রথম বারের মত শ্রীলংকায় এশিয়া কাপে ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলো বাংলাদেশ দল…সে সুবাদে ম্যাচফির টাকা হাতে পেয়েছিলো জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা…ঠিক তারপরই ছিলো ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফি আসর…কিন্ত হায় খেলতে যাবে কেমন করে ক্রিকেট বোর্ডের সেময়ে এতটা করুন হাল যে তাদের ফান্ডে তখন বিমানের টিকেট কিনে বিলেতে উড়াল দেবার টাকা-পয়সা যে নেই…ওমন বিপদে কর্তাদের বিশেষ অনুরোধে সায় দিয়েই এশিয়কাপ খেলে যে টাকা পেয়েছিলো ক্রিকেটাররা তার পুরোটাই খুশি মনে দিয়ে তুলে দিয়েছিলো কর্তাদের হাতে…যার ফলে মুখ রক্ষা তো হলোই দলের সেই সাথে সেবার আইসিসি ট্রফি খেলার সুযোগটা আর হাতছাড়া হয়নি…ওসময়টায় ছিলোনা কোন স্পনসরের ব্যাপার স্যাপার…
…দেশ স্বাধীন হবার পর এক সময়তো বড় লোকের খেলা বলে প্রায় ক্রিকেটাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো…এনিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে আবাহনী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাত শেখ কামালকে পাশে নিয়ে সেসময় আন্দোলনও করতে হয়েছিলো ক্রিকেটার ও সংগঠকদের…আর এখন কড়িকড়ি টাকা পয়সার ঝনঝনানি…কতনা বিশাল সুযোগ সুবিধা…নামী দামি কোচিং স্টাফের সমাহার…তারপরও মনের মত পছন্দের উইকেট নেই…এটা নেই…ওটা নেই…সেটা নেই…দলের একাদশে ডান-বাম মেশানো ঠিক নেই…আবহাওয়াটাও ভাল নেই কতনা কথা শুনতে হয়…খুব করেই মনে পড়ে অবহেলায় জর্জরিত ক্রিকেটের সেসব দিন গুলোর কথা…মনে পড়ে সে সময়ের বোর্ডের নিবেদিত প্রান দক্ষ সকল ক্রিকেট সংগঠক ও জাতীয় দলকে প্রশিক্ষন দিয়ে গড়ে তোলা কোচ চাঁদ খান,সৈয়দ আলতাফ,মসিউদ্দিন মন্টু,ওসমান খাঁন,বজলুর রশিদ,জালাল আহমেদ চৌধুরী প্রিয় এমুখ গুলোর কথা…মনে পড়ে অভিজ্ঞ গ্রাউন্ডসম্যান সেই লথিফের কথা…মনে পড়ে সেসময়কার অভিজ্ঞ আম্পায়রদের কথা…যাদের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম ক্রিকেটকে আজকের এপর্যায়ে এগিয়ে নিতে তাদের অবদানের কথা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে…ভাবতেই অবাক লাগে সেসব মানুষজনের অনেকেই ক্রিকেট অঙ্গনে আজ যেন অচেনা মানুষ…বর্তমান বোর্ড কর্তাদের কাছে ওদের অনেকেরই সত্যিকার মূল্যয়নটাও নেই…পুরানো দিন গুলোর খন্ড চিত্র এখানে ছবি সহকারে তুলে ধরার প্রয়াস…ছবি যে কথা কয়…
Shaheen
Sep 16. 2019
Great information Kiron Bhai. All hard work and sacrifices contributed to cricket’s current position.