ঢাকা ফুটবল লীগে প্রথম হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছিলেন বড় নাজির

Boro Nazir-2…দেশের ফুটবলের প্রানকেন্দ্র ঢাকা ফুটবল লীগ আসরের যেমন রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য তেমনি বহুল জনপ্রিয় ও আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা এআসরটিতে রয়েছে অনেক কীর্তি কাহিনী…রয়েছে কতনা রেকর্ড গড়া গোলের গল্প কাহিনী…দুঃখজনক হলেও সত্য সংরক্ষনের অভাবে ওসব কীর্তি গুলো আজ মুছে যাবার মত অবস্থায় দাড়িয়েছে…অনেক কিছুই আজ অজানাই রয়ে গেছে…সমস্যা হচ্ছে এসময়ে সবাই যেন বর্তমানকে নিয়েই ডুবে আছেন…রেকর্ড নিয়ে ভাবনার আগ্রহ-ইচ্ছে বা সময় যেন নেই…ফেডারেশনের কর্তাদের আর ক্লাব কর্তাদের যার কথাই বলা হোকনা কেন  কারোরেই এ দিকটায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ রয়েছে বলে মনে হয়না…তাইত ক্লাব বা ফেডারেশনে খোজ নিলে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে বা ক্লাব গুলোতে বছর বছর কারা কারা খেলেছেন তার তালিকাটাও মেলেনা !!!…বছরকার দলের গ্রুপ ছবিতো ভাবাই যায়না…সবচেয়ে যে দিকটা এমুহূর্তে আমাকে খুব করেই পীড়া দেয় তা হলো আজকাল তো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল কোন আন্তর্জাতিক আসরে খেল্লে মূল একাদশের নামের তালিকাটাও ছাপা হয়না !!!… ছাপার অক্ষরের নাম গুলো যে একটা সময় গবেষনার কাজে মূল্যবান দলিল হিসেবে যে কাজে আসবে ওটার গুরুত্বটাই উপলব্ধি করা হয়না…অবস্থাটা এমন যায়গায় দাড়িয়েছে যে কেউ আজ হতে ১০/১৫ বছর পর জাতীয় দলে খেলেছি বলে থাকলে তা খন্ডানোর কোন পথ খুজে পাওয়া যাবেনা…আজও অনেক ভুলে ভরা তথ্য আমরা সামনে টেনে নিয়ে আসছি…শুধু কি তাই তথ্য না জানার কারনে অনেক কিছু আবার বড় করে তুলে ধরাও হচ্ছেনা…এইত কদিন আগে মেয়েদের অনুর্ধ-১৮ সাফ ফুটবল আসরে আমাদের এক প্রতিভাবান খেলোয়াড়  ডাবল হ্যাটট্রিক সহ একাই ৭ গোল করে অসাধারন কীর্তি গড়ে রেকর্ড করলেন…ওটা যে আমাদের ফুটবলের ইতিহাসে যে কোন পর্যায়ের খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সীতে কোন ফুটবলারের এক ম্যাচে ব্যাক্তিগত সর্বাধিক গোলের দুর্লভ রেকর্ড তা কি আমরা আলাদা ভাবে তুলে ধরতে পেরেছি ??…পারিনি…নাম নিয়েও দেখলাম বিভ্রান্তি…এক যায়গায় দেখলাম লেখা সিরাত জাহান স্বপ্না আর আরেক যায়গায় লেখা মিশরাত জাহান মৌসুমি এবং অন্য এক যায়গায় ইশরাত জাহান স্বপ্না !!…আগের রেকর্ড হাতের কাছে নেইে এটা ঠিক তবে চেষ্টা কি করেছি আমরা এর আগে ওমন কোন নজীড় আছে কিনা জানার ??…এখানে স্মরনযোগ্য যে ইতিপর্বে ১৯৯১ সালে প্রি অলিম্পিক ফুটবল(অনুর্ধ-২৩) আসরে বাংলাদেশ দলের খ্যাতিমান স্ট্রাইকার নকিব ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ৫ গোল করে কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন…

7goal-5goal…এলেখায় ঢাকার ফুটবল লীগের প্রথম হ্যাটট্রিকের স্মৃতিকথা লিখে স্ট্রাইকার বড় নাজিরকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে…স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বারের মত ফুটবল লীগ মাঠে গড়িয়েছিলো ১৯৭২ সালে…যদিও সেবার ১৫ দলের লীগ লড়াইটা কোন এক কারনে অসামাপ্ত থেকে যায়…লীগের প্রথম ম্যাচটিতে মুখোমুখি হয়েছিলো ’৭০-র চ্যাম্পিয়ন বিআইডিসি (সাবেক ইপিআইডিসি) ও নবাগত আবাহনী ক্রীড়া চক্র দল দুটো…খেলাটি গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়েছিলো…সেবছর লীগের শুরুতেই প্রথম হ্যাটট্রিকটি এসেছিলো ওয়ান্ডারার্স ও দিলখুশার মধ্যকার খেলায়…সেদিন হ্যাটট্রিক সহ একাই ৪ গোল করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখিয়ে রেখেছিলেন ওয়ান্ডারার্সের চতুর গোলদাতা দক্ষ স্ট্রাইকার দীর্ঘকায় বড় নাজির…খেলায় বড় নাজিরের গোল নৈপূন্যে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ৫-১ গোলের ব্যাবধানে জয় পেয়েছিলো দিলখুশার বিরুদ্ধে…প্রথমার্ধেই বড় নাজিরের হ্যাটট্রিকে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ওয়ান্ডরার্স দল…বিরতির পর আরো এক গোল করে বড় নাজির তার চার গোল পূর্ন করেন…অপর গোলটি করেছিলেন কাজী সাত্তার…দিলখুশার হয়ে স্বান্তনা সূচক একমাত্র গোলটি করেন বদলি খেলোয়াড় পান্না…

Boro Nazir-1

…’৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ একাদশ ও রাষ্ট্রপ্রতি একাদশের মধ্যকার প্রতি ফুটবলে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দু দলের খেলোয়াড়দের মাঝে বড় নাজির বসা ডানের দ্বিতীয়….ডানে বল নিয়ে স্ট্রাইকার বড় নাজিরের কসরত…

…তুখোর সেন্টার ফরোর্য়াড নাজির আহমেদ তার দুই দশকেরও বেশী দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে নানা সময়ে ঘুরে ফিরে খেলে গেছেন বিপিডবলিউডি-ওয়ান্ডরার্স-বিআইডিসি-রহমতগঞ্জ ও সাধারন বীমায়…লীগে তার রয়েছে প্রচুর গোল…ছিলেন একাধিক খেলায় ম্যাচ জয়ের নায়ক…বড় নাজিরের খেলায় ক্ষিপ্রতা,শুটিং পাওয়ার ও হেড ওর্য়াক ছিলো নজড় কাড়ার মত…বিশেষ করে কুশলী স্কোরার বড় নাজিরের উড়ন্ত সাইড ভলি ও ডিগবাজি দেয়া শট গুলো ছিলো দেখবার মত…যা থেকে অনেক কটি গোলও করেছেন বড় নাজির…বলতেই হয় গোল নৈপূন্যে মাঠ মাতিয়ে ঢাকা মাঠের দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় এক ফুটবলার ছিলেন স্ট্রাইকার বড় নাজির…

Boro Nazir-4…বড় নাজিরের লীগের সূচনাটা ছিলো  ১৯৫৪ সালে তৃতীয় বিভাগ লীগে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে এবং শেষটা ছিলো’৭৮ সালে বীমার হয়ে…মাত্র ১৪ বছর বয়সে তৃতীয় বিভাগ লীগে খেলা শুরু করে মন কাড়েন অনেকের…এরপর ‘৫৯ সালে প্রথম বিভাগ লীগ আসরে খেলতে নেমেছিলেনি বিপিডবলিউডির হয়ে…এরপর ‘৬০ সালে যেয়ে লীগে প্রথম গোলের দেখা পান বড় নাজির…তাও আবার মোহামেডানের মত বড় দলের বিরুদ্ধে…তারপর থেকেই মোহামেডানের বিরুদ্ধে খেলা হলেই সৌভাগ্যক্রমে গোলের দেখা পেয়ে যেতেন বড় নাজির…’৭২ সালে ওয়ান্ডারার্সে খেলেই পরের বছরই নাজির যোগ দিয়েছিলেন বিআইডিসি ক্লাব দলে…দলটায় জাতীয় দলে খেলা ব্যাকের খেলোয়াড় নাজির খেলতেন বলে স্ট্রাইকার নাজির পরিচিত হয়ে উঠেন বড় নাজির হিসেবে…’৭৩ সালে বড় নাজিরের বিআইডিসি দল চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয় করে নিয়েছিলো…লীগের বাইরে ঢাকা জেলার হয়ে বড় নাজির শেরে বাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল আসরে নৈপূন্যের সাথে খেলে গেছেন বেশ কয়েক বছর.. ‘৭১-র পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠত প্রথম ৩ জাতীয় ফুটবল আসরেই ঢাকার হয়ে বড় নাজির চ্যাম্পিয়নের স্বাদ নিয়েছেন…ছিলেন ঢাকা জেলা দলের দলনায়কও…স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রথম ফুটবল মাঠে গড়িয়েছিলো ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ একাদশ ও রাষ্ট্রপ্রতি একাদশের মধ্যকার প্রীতি ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে…সে খেলায় বড় নাজির সুযোগ পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপ্রতি একাদশ দলে…’৭২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রতিযোগিতামূলক আসর স্বাধীনতা দিবস ফুটবলে বড় নাজির খেলেছিলেন বিআইডিসির হয়ে…

Boro Nazir-3

….বামে ‘৭৩ সালের লীগ চ্যাম্পিয়ন বিআইডিসি দলের বড় নাজির দাঁড়ানো বাঁয়ে…ডানে ‘৭৪ সালে মোহামেডানের বিরুদ্ধে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করার পর স্বতীর্থ খেলোয়াড়রা বড় নাজিরকে কোলে তুলে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন…

No comments.

Leave a Reply