৩৬ বছর আগে আজকের এইদিনে সালাম মুর্শেদী ২৭ গোলের দুর্লভ রেকর্ডটি গড়েছিলেন

salam-1a-…মনে হয় এইত সেদিনের কথা অথচ দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩৬টি বছর…ভাবাই যায় না…সেই ১৯৮২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর আজকের এইদিনটি ছিলো ঢাকা ফুটবল লীগ আসরের স্মরনীয় অসাধারন এক রেকর্ড গড়ার দিন…ঢাকা স্টেডিয়াম মাতিয়ে তুলে লীগ আসরের এক মরসুমে খ্যাতিমান স্ট্রাইকার কাজী সালাউদ্দিনের করা সর্বোচ্চ ২৪ গোলকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সর্বাধিক ২৭ গোলের দুর্লভ রেকর্ডটি গড়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখিয়ে রেখেছিলেন সাদা কালোর ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ৯ নম্বর জার্সীধারী সুদর্শন স্টাইলিশ কুশলী গোলদাতা সালাম মুর্শেদী…যে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙ্গতে পারেনি বলে ৩৬ বছর ধরে অক্ষতই রয়ে গেছে…তাইত ফুটবল নিয়ে কিছু লিখতে গেলে বা ফুটবল আড্ডায় মেতে থাকলে ঘুরেফিরে রেকর্ডের নায়ক সালাম মুর্শেদীর নামটি চলে আসে…বলতেই হয় ২৭ গোলের সেই অতুলনীয় রেকর্ডটির কারনেই ‘৮২-র ঢাকা লীগের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন খ্যাতিমান স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদী…যেন সালাম মুর্শেদীময় হয়ে উঠেছিলো সেবারের লীগ মরসুমটা…সেই সুবাদে খ্যাতি আর জনপ্রিয়তার চূড়ায় উঠেছিলেন ক্ষিপ্রগতির সুঠামদেহী তুখোর স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদী…দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সালামের গোল নৈপূন্যে ‘৮২ সালে লীগ শিরোপাটাও ঘরে তুলে নিয়েছিলো মোহামেডান দল…

salam-1c

…না বল্লেই নয় ’৮২ সালটাই ছিলো দারুন ভাবে জলে ওঠা স্ট্রাইকার সালামের গোটা খেলোয়াড়ী জীবনের স্মননীয় এক বছর…পুরো বছরটাই ছিলো আলোকিত…এসময়টায় মন থেকে যাই করতে চেয়েছেন তাই করে ফেলতে পেরেছেন আপন দক্ষতায়…সালামের মাঝে গোল ক্ষুদাটা ছিলো ভিষন…ভাল খেলার চেষ্টাটা ছিলো…গোল করে দলকে সাফল্যের স্বাদ এনে দেবার তাগিদ ছিলো প্রবল…তাইত মাঠে নেমে রীতিমত ছটফট করতেন গোল করার আশায়…‘৮২ সালটায় ফুটবল তাকে দিয়েওছে যেন দুহাত ভরে…সেবার লীগ লড়াইয়ের প্রারম্বে নিয়েছেন ফেডারেশন কাপে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের স্বাদ…এরপর লীগ আসরে মনমাতানো এক একটি গোল করে মোহামেডানের কোটি ভক্তকে আনন্দে ভাসিয়ে লীগ ফুটবল আসরে ’৭৪ সালে সালাউদ্দিনের করা সর্বোচ্চ ২৪ গোলের রের্কডটা ভেঙ্গে একমরসুমে সর্বাধিক ২৭ গোলের রেকর্ডটা নতুন করে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন…সাথে নিয়েছেন লীগ চ্যাম্পিয়নের স্বাদ…শুধু কি তাই স্ট্রাইকার সালাম সেবার নিজ জেলা খুলনাকে নেতৃত্ব দিয়ে ভাল খেলার মাঝে শেরে বাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল আসরে  শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা হাতে তুলে নিয়ে প্রথম বারের মত খুলনাবাসীকে উপহার দিতে পেরেছিলেন…সেমি ফাইনালে শক্তিশালী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করে খুলনাকে ফাইনালে টেনে তুলেছিলেন দলনায়ক সালাম…নিজ জেলা খুলনা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই আসরের সেরা খেলোয়াড়ের সোনার পদকটাও জয় করেছিলেন খুলনার ফুটবলের গর্ব সফল দলনায়ক সালাম মুর্শেদী…সালামের গোল মেশিনটা যেন থামছিলোইনা সেবার…লীগে সর্বাধিক ২৭ গোলের রেকর্ড গড়ার পর আরো একটি ঈর্ষনীয় কীর্তি গড়ে বছরটাকে চির স্মরনীয় করে তুলেছিলেন গোল মাষ্টার খ্যাত তুখোর স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদী…এবার করে বসেন দেশের বাইরে এক আসরে সর্বাধিক গোলের অনন্য এক রেকর্ড…সেই সাথে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান দলকে প্রথম বারের মত বিদেশের মাটি হতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দিতে মূখ্য ভুমিকাটাই রাখেন…ভারতের দুর্গাপুরে আশীষ জব্বার ফুটবল টুর্নামেন্টে এক হ্যাটট্টিক সহ সর্বোচ্চ ১০ গোল করে মোহামেডানের চ্যাম্পিয়নের নায়ক হয়ে ওঠেন সালাম…ফেডারেশন কাপ-লীগ-জাতীয় ফুটবল-ভারতের আশীষ জব্বার সব মিলিয়ে ‘৮২-র মরসুমে স্ট্রাইকার সালাম করেছিলেন সর্বমোট ৪০ গোল…

salam-1b…১৯৮২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবলের প্রথম পর্বেই সালাম ১৬ খেলায় করেছিলেন ১৮ গোল…আর তখনি নতুন রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনাটা যেন উজ্জল হয়ে উঠেছিলো…এরপর সুপার লীগের শুরুতেই চমক দেখিয়ে সালাম টানা দুই ম্যাচে ৩টি করে ৬ গোল করে বসলে সালাউদ্দিনের সর্বোচ্চ ২৪ গোল স্পর্শ করে ফেলেন…এতে করে সালামের সর্বাধিক গোলের নতুন রেকর্ড গড়াটা ছিলো তখন সময়ের অপেক্ষামাত্র…অবশেষে বাকি ৫ খেলায় আরো ৩ গোল গোল করে ২৭ গোল করে নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলেন সালাম…৩৬ বছরেও সালামের সে রেকর্ডটি কারো পক্ষেই ভেঙ্গে ফেলা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি…তাই আজও ফুটবল প্রেমিকদের কাছে স্মরনীয় হয়ে আছে সালাম নামটি…কে জানে আর কত কাল অক্ষতই থেকে যায় সালামের রেকর্ড…২৭ গোলের রেকর্ডের কথা বলতে যেয়ে সালাম মুর্শেদী কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করেন দলের স্বতীর্থ ফুটবলারদের কথা…বরাবরই বলেছেন আমার ২৭ গোলের রেকর্ড গড়ার কৃতিত্বটা আমার একার নয়,সবার…দলের সবার উৎসাহ আর আন্তরিক সহযোগিতার অবদানের কথাটা ভুলতে পারেননা সালাম…সেবার দুই হ্যাটট্টিক সহ মোট ২৩ ম্যাচে সর্বাধিক ২৭ গোল করেছিলেন সালাম…যার মাঝে রয়েছে দু খেলায় ৪টি করে গোল…৩ গোল করে করেছেন মোট ৪ ম্যাচে…সে বছর লীগের প্রথম পর্বের ১৬ খেলায় স্ট্রাইকার  সালামের ১৮ গোল আসে যথাক্রমে আজাদ(১)-ফরাশগঞ্জ(১)-ইষ্টএন্ড(১)-উয়ারী(৪)-ধানমন্ডি(১)-ওয়ান্ডারার্স(১)-পুলিশ(৩)-দিলখুশা(৪)-ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ২ গোল সহ মোট ১৮ গোল…এরপর সুপার লীগের ৭ খেলার মাঝে সালামের ৯ গোল আসে এভাবে উয়ারী(৩)-ধানমন্ডি(৩)-রহমতগঞ্জ(১) এবং ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে শেষ ২টি গোল নিয়ে গোল সংখ্যা দাড়ায় ২৭টি…

salam-1d

…বামে ‘৮২-র লীগ চ্যাম্পিয়ন ও ডানে ভারতের আশীষ জব্বার স্মৃতি আসরে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান দলে সালাম…

 …সেবার লীগে সালামের দুই হ্যাটট্টিক আসে প্রথম পর্বে দিলখুশার ও সুপার লীগে ধানমন্ডির বিরুদ্ধে…দিলখুশার বিরুদ্ধে মোহামেডানের ৪-০ গোলে জয়ের দিনে সবকটি গোলই করেছিলেন সালাম…আর ধানমন্ডির সাথে খেলায় হ্যাটট্টিকটি করার মাঝেই সালাম সেদিনই সালাউদ্দিনের ২৪ গোলের রেকর্ডটা ছুয়ে ফেলেছিলেন…পরের ম্যাচটিতে ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে গোলের দেখা না পেলেও  এরপর রহমতগঞ্জের বিরুদ্ধে বহু অপেক্ষার প্রহর গোনাটা শেষ হয়…মাঠ ভরা সমর্থকের উল্লাস আর চিৎকারের মাঝে খেলার দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে সেই অনেক চাওয়ার কাঙ্খিত গোলের দেখা পান সালাম মুর্শেদী…মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে বাম প্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে দেশ সেরা স্টপার ব্যাক অভিজ্ঞ নান্নুকে তড়িৎ ফাকি দিয়ে বিপদ সীমানায় ঢুকে মাটি ঘেষা জোড়ালো প্লেসিং শটে বলকে জালে পাঠিয়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন…এ গোলটির মাঝে লীগে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছিলেন সালাম মুর্শেদী…এখেলায় মজার ঘঠনা হলো এক সালাউদ্দিনের ২৪ গোলের রেকর্ডটি ভেঙ্গেছিলেন সালাম আরেক সালাউদ্দিনকে বোকা বানিয়ে…আর সেই আরেক সালাউদ্দিনটি হচ্ছেন সেদিনের রহমতগঞ্জের গোলকিপার সালাউদ্দিন…’৮২-র মোহামেডানের তারকা খেলোয়াড় জোশীরই ছোট ভাই হলেন গোলকিপার সালাউদ্দিন…এখানে স্মরনযোগ্য যে ‘৭৭ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে লীগ ফুটবল জীবনে প্রথম খেলতে নেমে এই রহমতগঞ্জ ক্লাবের বিরুদ্ধেই গোলের দেখা পেয়েছিলেন সালাম…রহমতগঞ্জের বিরুদ্ধে ২৫ তম গোলের পর ইষ্টএন্ডের সাথে গোল করা হয়নি সালামের…ঠিক তার পরের ম্যাচেই ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে ২টি গোল করে সালাম তার সংখ্যা ২৭-এ নিয়ে যান…লীগের শেষ খেলায় চির প্রতিদ্বন্দি আবাহনীর বিরুদ্ধে অবশ্য গোলের দেখা মেলেনি সালামের…যে কারনে সালামকে ২৭ গোলের রেকর্ডের তৃপ্তি নিয়ে লীগ আসরের ইতি টানতে হয়…’৮০ সাল হতে ‘৮৬ সাল এই ৭ বছরে মোহামেডানের সাদা কালো জার্সী গায়ে জড়িয়ে সালাম মুর্শেদী করেছেন মনমাতানো ৭৪ গোল…আর পুরো খেলোয়াড়ী জীবনে নানা আসর মিলিয়ে ঢাকা স্টেডিয়ামেই করেছিলেন শতাধিক গোল…

Picture100

No comments.

Leave a Reply