এক কালের প্রখ্যাত ফুটবলার ও জাতীয় দলের কোচ ওয়াজেদ গাজীও চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন
…রাত্রটা কেটেছে নির্ঘুম…বিছানায় হেলান দিতেই কেন জানি মনটা ছটফট করছিলো…চোখে ছিলোনা ঘুমের রেশ…খানিক পর উঠেই চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই ফেইসবুকটা ওপেন করা মাত্রই সুদূর সৌদি আরব হতে মহাপাগল তারিক ভাইযের ম্যাসেজ ঘুমাননি…বলেছিলাম মন ভাল নেই তাই ঘুমও নেই…ভাবিনি তখনও কিছু পরে আরো একটা বড় শোক বার্তায় মনটা আরো বেশী খারাপ হয়ে যাবে…সকালে অফিসে এসেই জানা হলো এক সময়ের আমার খুব কাছের প্রিয় ফুটবল ব্যাক্তিত্ব শ্রদ্ধাভাজন গাজী ভা্ই আর নেই(ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)…টানা বেশ কমাস অসুস্থতায় ভুগে বলতে হয় বড় অবহেলায় ও অসহায় ভাবে দিনযাপনের মাঝে ১৩ই সেপ্টেম্বর রোজ বৃহ:প্রতিবার সকাল ৯টার দিকে যশোরে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৮০ বছরের প্রিয় গাজী ভাই…তার মৃত্যুর খবরটা শোনা আমার কাছে ছিলো বড় কষ্টের…আশি-নব্বুই দশকে গাজী ভাইয়ের সাথে আমার খুব মধুর সম্পর্ক ছিলো…ভিষন স্নেহ করতেন আমায়…ক্লাব আঙ্গিনায় বা স্টেডিয়াম চত্তরে দেখা হলেই আলাপ জুড়ে দিয়ে কিছু না খাইয়ে ছাড়তেন না প্রিয় গাজী ভাই…সেই গাজী ভাই আজ আর নেই ভাবতেই খারাপ লাগছে…কতনা স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখে…প্রিয় গাজী ভাই ছিলেন থাকবেন মনের গভীরে…তার মিস্টি মধুর স্মৃতি গুলো যে ভোলার নয়…গাজী ভাই যেমন ছিলেন ভাল মানের এক কুশলী ফুটবলার তেমনি ছিলেন ভাল মনের এক ভাল লাগার মানুষ…তিনি ছিলেন অনেকেরই প্রিয় পাত্র ও শ্রদ্ধাভাজন এক ব্যাক্তিত্ব…
…কবছর আগে ফুটবলার সালাম মুর্শেদীকে নিয়ে আমার লেখা একটা বইয়ের কাজে তার সাথে কথা হয়েছিলো…সালাম সম্পর্কে অভিমত নিয়েছিলাম গাজী ভাইযের…শেষ যেবার কথা হয়োছিলো মনে খুব কষ্ট নিয়েই গাজী ভা্ই বলছিলেন কেউ রাখেনা খোজ…কষ্টে আছি…লম্বা সময় ধরে ঢাকা স্টেডিয়াম ও নিজ জেলা যশোরের মাঠ মাতিয়ে গেছেন তুখোর উ্ইঙ্গার ওয়াজেদ গাজী…ছিলেন যেন এক চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার…যশোর ফুটবল অঙ্গনের গর্ব তাকে বলা যায়…খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিকে গাজী ভাই একটা সময় কলকাতা লীগেও খেলেছিলেন…তাছাড়া তৎকালিন ইস্ট পাকিস্তান দলের হয়ে ওয়াজেদ গাজী নেপালেও খেলেছেন সুনামের সাথে…’৬৮ সালে জাতীয় ফুটবলের রানারআপ যশোর জেলা দলের হয়ে খেলেছেন…অবশেষে ‘৭৭ সালে প্রথমবারের মত যশোর জেলা দলের জাতীয় ফুটবল আসরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়ের পেছনে বিশেষ অবদানও রেখেছিলেন গাজী নৈপূন্যের সাথে খেলে…’৭০ সালে মোহামেডানের হয়ে ভারতেও থেলেছেন দাপটের সাথে…’৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি একাদশ ও বঙ্গবন্ধু একাদশের মধ্যকার প্রীতি ফুটবল ম্যাচেও খেলেছেন রাষ্ট্রপতি একাদশের হয়ে…’৭৩ সালে রাশিয়ান মিনস্ক ডায়নামো দলের বিরুদ্ধেও নিয়মিত খেলেছেন…এমন কি যশোর জোনাল দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন মিনস্ক ডায়নামো দলের বিরুদ্ধে…’৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা ফুটবল লীগের প্রথম চ্যাম্পিয়ন বিজেআইসি দলের অন্যতম নায়ক ছিলেন ওয়াজেদ গাজী…তেমনি ভাবে ‘৭৫ সালে ফুটবল লীগে মোহামেডানের চ্যাম্পিয়নের পেছনে গাজীর অবদান ভোলার নয়…সেবছর মোহামেডান তাদের চিরশত্রু আবাহনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ব্যাবধানে ৪-০ গোলে জয়ের পেছনেও ভুমিকা রাখেন গাজী…সেদিন চমৎকার একটি গোলও করেছিলেন কৃতি উইঙ্গার গাজী…
…খেলা ছেড়ে দীর্ঘ কোচিং জীবনে বিজেএমসি-রহমতগঞ্জ-আরামবাগ-মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-ব্রাদার্স ইউনিয়ন-ফরাশগঞ্জ-শেখ রাসেল-শান্তিনগর-আনসার দল সহ আরো কটি ক্লাবকে কোচিং করিয়ে কত ফুটবলারকেই না নিজ হাতে গড়েছেন…এনে দিয়েছেন দল গুলোকে সাফল্য…জাতীয় দলকেও কোচিং করিয়েছেন…জাতীয় দল নিয়ে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন…আরামবাগ দলকে নেপালের আনফা কাপেও ফাইনালে তুলে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন…লীগেেআরামবাগ ক্লাবের সেরা সাফল্য আসে কোচ গাজীরই হাত ধরে…ব্রাদার্স ইউনিয়নকে প্রথম বারের মত লীগ শিরোপা ট্রফিও এনে দিয়েছিলেন কোচ গাজী ভাই…তাছাড়া কোচ গাজী ভাই ’৯৩ সালে বাংলাদেশ আনসারকে কোচিং করিয়ে জাতীয় ফুটবল আসরে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন…একটা সময় শান্তিনগর ক্লাবকে কোচিং করিয়ে ২য় বিভাগ চ্যাম্পিয়ন করিয়ে প্রথম বিভাগে তুলে এনেছিলেন কোচ গাজী ভাই…বলতেই হয় ঢাকা মাঠের অন্যতম সেরা সফল কোচ ছিলেন ওয়াজেদ গাজী…বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি্তে একবার তাকে সেরা কোচ মনোনীত করার মাঝে পুরস্কৃত করে সম্মানিত করেছিলো…
…ওয়াজেদ গাজী নামের ফুটবল ব্যাক্তত্বটি সাড়াটা জীবন যেন কাটিয়ে দিয়েছেন তার প্রানের ফুটবল মাঠেই…সময় হিসেব করলে ৫ দশকও ছাড়িয়ে যাবে…চ্যাম্পিয়ন দল গুলোতে খেলে গেছেন যেমন সুনামের সাথে তেমনি কোচিং জীবনে বেশ সফলতার মুখ দেখার মাঝে নিজ হাতে গড়েছেন অনেক নামী তারকা ফুটবলার…অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস শেষ জীবনে এসে তার দিন কেটেছে চরম অবহেলায় ও দুঃখ কষ্টে অসহায়ভাবে দিন যাপনের মাঝে…কজনইবা তার খবর নিয়েছে…ঢাকায় গিয়ে সুচিকিৎসা করার মত সৌভাগ্য তার কপালে জোটেনি…চিত্রটা সত্যি বড় করুন…বড় বেদনাদায়ক…ভাবতেই কষ্ট লাগে…প্রিয় মানুষটার আত্মার শান্তি কামনা করছি…প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন গাজী ভাইকে বেহেস্ত নসিব করেন…
Recent Comments