বড্ড অসময়ে চির বিদায় নিলেন জাতীয় ফুটবল দল ও মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলার মন্টু
মঙ্গলবার ২৬জুন আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়ার বাচা মরার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা দেখতে বসা মাত্রই রাত্র করে ফোন পেলাম এক সময়ে ভিক্টোরিয়াতে খেলা পরিচিত মুখ পারভেজ ভাইয়ের । কল্পনাও করিনি একটা দুঃসংবাদ দেবার জন্যই তিনি ফোনটা করেছিলেন । বল্লেন কিরন ভাই প্রিয় ফুটবলার মন্টু ভাই আর নেই । হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে হঠাৎ করেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলার আহসানউল্লাহ মন্টু । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন । কথাটা শুনেই ভিষন খারাপ লাগল । বিশ্বাসই হচ্ছিলোনা । বড্ড অসময়ে আচমকা চির বিদায় নিয়ে চলে যাবেন প্রিয় মুখ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গর্বের কৃতি সন্তান জাতীয় ফুটবল দল ও মোহামেডানের সাবেক খ্যাতিমান তারকা ফুটবলার স্টপার ব্যাক আহসানউল্লাহ মন্টু ভাই ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিলো । চোঁখে ভেসে উঠছিলো তখন এইত কদিন আগে পুরানো সতীর্থ ফুটবলারদের সাথে খ্যাতিমান ফুটবলার শাব্বীরের বাসায় আড্ডায় মেতে থাকার ছবিটা । ফুটবলার মন্টু ছিলেন ভাল মনের ছিমছাম চুপচাপ স্বভাবের এক মানুষ । সব সময়েই পর্দার আলোয় না এসে বরং ফুটবল অঙ্গনে নিজেকে আড়াল করেই রেখেছিলেন । সবার সাথেই তার ছিলো ভাল সুসম্পর্ক । তারকা খেলোয়াড় মন্টুর অকাল মৃত্যুতে সাবেক খেলোয়াড়দের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া । দোয়া করি আল্লাহ যেন ফুটবলার মন্টুকে বেহেস্ত নসিব করেন । আমিন ।
এক সময়ের জাতীয় দল ও ঢাকা মোহামেডানের কৃতী স্টপার ব্যাক ছিলেন দীর্ঘকায় আহসানউল্লাহ মন্টু । একটানা ১৩ বছর ঢাকা লিগ খেলে গেছেন মন্টু সুনামের সঙ্গেই । শুরুটা ছিল ’৮১তে ফরাশগঞ্জের হয়ে । ’৮৩তে দলবদল করে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে । এক বছর কাটিয়ে ‘৮৪ সালে গিয়ে খেলেছিলেন সাধারণ বীমা ক্লাবে । এরপর ’৮৬ সালে ফের দলবদল করে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান দলে যোগ দিয়ে টানা খেলে গেছেন সুনামের সঙ্গে । অবশেষে খেলা ছেড়েছিলেন ’৯৩ সালে । খেলা ছেড়ে কোচিং পেশাতেও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন মন্টু । ছিলেন সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবের সক্রিয় সদস্য । নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথেই সোনালী অতীত ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন সবার পছন্দের মানুষ আহসানউল্লাহ মন্টু ।
বলতেই হয় ঐতিহ্যবাহী বহুল জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সিতে দাপটে খেলার পরই মন্টু নিজেকে তুলে ধরেছিলেন ভালোভাবে এবং জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিজ যোগ্যতাগুণেই । মোহামেডানে মন্টুর উত্থানের পেছনে ইরানী খ্যাতিমান কোচ নাসের হেজাজীর অবদানটাই যেন ছিলো বেশী । কোচ হেজাজীর বেশ পছন্দের খেলোয়াড়ই ছিলেন রক্ষন দূর্গের দীর্ঘকায় কৃতি খেলোয়াড় মন্টু । বলা চলে কোচ হেজাজীর সংস্পর্শে থেকেই নিজেকে ভাল ভাবে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন ব্যাক মন্টু ।
স্টপার ব্যাক মন্টু ’৮৪ সালে প্রথমবারের মতো খেলেন জাতীয় যুব দলে । এরপর ঢাকায় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন ’৮৫, ’৮৭, ’৮৯ এই তিন বছর । এর মাঝে মন্টু ’৮৯-র প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ লাল দলের হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়নের স্বাদও নেন । এছাড়াও মন্টু জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ’৮৮তে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ও ’৮৯ সালের বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল আসরে । তাছাড়া ক্লাব দল মোহামেডানের হয়ে ’৮৮ সালে মন্টু নাগজি ট্রফিও খেলেছিলেন । ওদিকে জাতীয় ফুটবল আসরে মন্টু ’৮১ হতে ’৯৩ সাল অবধি একটানা খেলেছেন কুমিল্লা জেলা দলের পক্ষে । এর মাঝে ’৮৬ সালে একবার নিয়েছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নের স্বাদ ।
Recent Comments