অসুস্থ ফুটবলার ‘মনুর’ সাহায্যে হাত বাড়ালেন সালাম মুর্শেদী

MONU-66                                         …বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের হয়ে আশি দশকে মাঠ মাতিয়ে রেখেছিলেন তারকা ফুটবলার ক্ষিপ্রগতির উইঙ্গার ”মিজানুর রহমান মনু”…সেই মনু আজ দীর্ঘদিন লিভারের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আর্থিক অসচ্ছলতার মাঝে জীবন যুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন…এরই মাঝে দুদুবার তার অপারেশন করানো হয়েছে…মনুর এই অসহায় অবস্থায় আগ্রহ ভরে এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারই এক সময়ের জাতীয় দল সেই সাথে ঢাকা মোহামেডানের সতীর্থ খেলোয়াড় আজকের বাফুফের সিনিয়র সহ সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি ’এনভয় গ্রুপের’ মহাব্যবস্থাপক সালাম মুর্শেদী…অসুস্থ ফুটবলার মনুর সুচিকিৎসার জন্য তার পরিবারের হাতে ঢাকার লীগ ফুটবলের এক মরসুমে রেকর্ড গড়া “২৭” গোলের নায়ক এনভয় গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক সালাম মুর্শেদী ও তারই বড় ছেলে এনভয় টেক্সটাইলের পরিচালক ইসমাম সালাম তুলে দিয়েছেন দুই লক্ষ টাকা…

                                            … “৮৭ সালের ঢাকার  প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ ফুটবলে মনু বাংলাদেশ সবুজ দলের হয়ে খেলে “সেরা খেলোয়াড়ের” পুরস্কারও লাভ করেছিলেন…ছিলেন “৮৬র লীগে মোহামেডানের লীগ চ্যাম্পিয়নের অন্যতম নায়ক…’৮৭র প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ সাদা দলের হয়ে চীন ও কলকাতার ইষ্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মনুর করা দুরপাল্লার শটে দুটো মনমাতানো দর্শনীয় গোল আজও যেন জ্বল জ্বলে হয়ে আছে অনেকেরই কাছে…

MONU55

…”৮৫ ও “৮৭ সালে মনুকে নিয়ে দিলু খন্দকার ও নাজমুল আমিন কিরনের লেখা “ক্রীড়াজগত” ম্যাগাজিনে…

                                              …খেলোয়াড়ী জীবনে সাদা কালো জার্সীর ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডানের চির শত্রু আকাশীর আবাহনী দলটার বড় আতন্কের নামই ছিলো মনু…’৮৫ ও ‘৮৬ এই দুবছরেই আবাহনীর বিরুদ্ধে গোল করে রীতিমত মাঠের হিরো বনে গিয়েছিলেন উইঙ্গার মনু…’৮৬ মরসুমে গুরুত্বপূর্ন মর্যাদার লড়াইয়ে  আবাহনীর বিরুদ্ধে মনুর গোলই পয়েন্টে এড়িয়ে থাকা আবাহনীর স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পাইয়ে দিতে অনেকখানি ভূমিকা রেখেছিলেন মনু…সেবছর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে লীগ শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে তুলতে আবাহনী কলকাতা মোহামেডান থেকে উড়িয়ে এনেছিলো নাইজেরিয়ান তুখোর ষ্ট্রাইকার চিমা এবং ষ্টপার ব্যাক মনোরঞ্জন ও কিপার ভাস্কর গাঙ্গুলীকে…সেদিন জয় নয় ড্র করলেই চ্যাম্পিয়নটা নিশ্চিত হয়ে উঠত আবাহনীর…তবে খ্যাতিমান কিপার ভাস্করকে বোকা বানিয়ে একেবারে অসহায় অবস্থায় দাড় করিয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর হতে চোখ ধাধানো গোল করে মনু আবাহনী ভক্তদের রীতিমত কাদিয়ে ছেড়েছিলেন…গোল করা ছাড়াও সুন্দর ভাবে বলের যোগান দিয়ে ইলিয়াসকে দিয়ে আরো একটি গোল করিয়ে মনু হয়ে উঠেন সেদিনের ম্যাচ জয়ের নায়ক…

                                                  …মাঠ মাতানো উইঙ্গার মনু ১৯৮৪ হতে ’৮৮ সাল অবধি মোহামেডানে খেলেছিলেন…এর মাঝে ”৮৪ হতে “৮৬ এই ৩ বছর মনু খ্যাতিমান ষ্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীর সতীর্থ খেলোয়াড় হিসেবে এক সাথে খেলেছিলেন…মনু “৮৬ সালে সালাম মুর্শেদীর সাথে নিয়েছিলেন লীগ চ্যাম্পিয়নের স্বাদ…ওদিকে মনু ’৮৭ ও “৮৮ সাল এদুবছর ষ্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীকে পেয়েছিলেন মোহামেডান ফুটবল দলের ম্যানেজার হিসেবে…
…মনু একবারমাত্র ১৯৮৫ সালে তার প্রিয় ফুটবলার তুখোর ষ্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীর সাথে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের কায়দে আযম ট্রফিতেও খেলেছিলেন…এছাড়া মনু জাতীয় দলের হয়ে ‘৮৬ ও ‘৮৭ দুবার ঢাকার প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ এবং ‘৮৫-’৮৬-’৮৭ এই তিনবছর জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের কায়দে আযম ট্রফিতে খেলেছিলেন…

MONU-5

…অসুস্থ মনুকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেলেন মোহাপাগল ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থক দলের তারিক-করিম ও ওয়াজেদ…

                                            …সালাম মুর্শেদীর এই উদারতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে অসুস্থ ফুটবলার মনু আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন…অনেকটা কান্না জড়িত কন্ঠে শুধু এটাই বল্লেন আমার প্রিয় মানুষ সতীর্থ খেলোয়াড় সালাম ভাই ফোনে আমার সাথে কথা বলেছেন,খোজ খবর নিয়েছেন,ভাল থাকার প্রেরনা দিয়েছেন আমার কাছে এটাই যেন বেশী মূল্যবান আর বড় পাওয়া…মনু কৃতজ্ঞভরে স্মরন করে বলেন খেলোয়াড়ী জীবনেও সালাম ভাই ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের মতই শ্রদ্ধার পাত্র ও প্রেরনাদাতা…ভাল খেলার ব্যাপারে সব সময়ই উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন সালাম ভাই…মনে পড়ে ‘৮৬ সালে আবাহনীর বিরুদ্ধে গোল করার পর সালাম ভাই জড়িয়ে ধরে আমাকে চুমো দিয়েছিলো…পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত সেই ছবিটা আজও যত্ন সহকারেই রেখে দিয়েছি…বলেন পুরানো দিনের সুখকর স্মৃতির পাতা গুলো যখন দেখি তখন মনে অন্যরকম এক শিহরন জাগে…ভালও লাগে সেই সাথে খারাপও লাগে…কষ্টও পাই…মনুর খারাপ লাগা বা কষ্টের কথাটা জানা হয়নি যদিও তবে বুঝতে কষ্ট হয়নি একটুও…যে লাল সবুজ ও সাদা কালো জার্সী গায়ে জড়িয়ে মাঠে জীবনের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে গেছেন সেই মোহামেডান ক্লাব বা বাফুফেকে তার আজকের জীবন যুদ্ধে লড়াই করার এই অসহায় সময়টায় পাশে পাননি…এ যেন এক চাপা কষ্ট ও দুঃখভরা বেদনার গল্প কাহিনী…

MONU-3C21

….মোহাপাগল ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থক দলের চার অনুষ্ঠানে ফুটবলার মনুকে দেখা যাচ্ছে…

                                    …অসুস্থ মনু দুটো নাম বড় কৃতজ্ঞচীত্তে স্মরন করলেন…এদুজন হলেন টিভি চ্যানেল ২৪ এর স্পোর্টস এডিটর প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক দিলু খন্দকার ও মোহাপাগল ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থক দলের প্রতিষ্ঠাতা টি.ইসলাম.তারিক…মনু বলেন এনাদের কারনেই আমার অসুস্থতার খবরটি অনেকেই জেনেছেন…নানা ভাবেই এদুজন যেভাবে পাশে থেকেছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তা ভোলার নয়…তারিক ভাইয়ের সূত্রেই সুদূর যুক্তরাষ্ট্র হতে এক সময়ের জাতীয় দল ও মোহামেডানের খ্যাতিমান ফুটবলার শ্রদ্বেয় শামসুল আলম মঞ্জু ভাই ফোন করে আমার খবর নিয়েছেন শুধু নয় সাহায্যেরও হাত বাড়িয়েছেন…তেমনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তারকা ফুটবলার রনজিতদাও হেলপ করেছেন…তাছাড়া দেশ বিদেশ হতে  মোহাপাগল ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থক দলের বেশ কজন সমর্থকও সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন…সবার সুস্বাস্থ ও মঙ্গল কামনা করা ছাড়াও অসুস্থ মনু ক্রীড়াঙ্গনের মানুষজনের কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন…

No comments.

Leave a Reply