চলে গেলেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কিংবদন্তি ফুটবলার আরজু

Picture1২২ মার্চ রোজ মঙ্গলবার সকালে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার জগতে পাড়ি জমালেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কিংবদন্তি ফুটবলার প্রিয় মুখ ফজলুর রহমান আরজু ভাই(ইন্না লিল্লাহে…রাজিউন)। দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন প্রিয় ফুটবলার আরজু ভাই। অবশেষে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন আরজু ভাই।সকালে অফিসে এসেই প্রিয় মুখ আরজু ভাইয়ের চীর বিদায়ের দু:সংবাদটি পাব ভাবতেই পারিনি। আমার খুব কাছের বন্ধু আরজু ভাইয়ের ছেলে সুইডেন প্রবাসী আরিফই ফোন করে কান্না জড়িত কণ্ঠে দু:সংবাদটি জানালো।তাকে স্বান্তনা দেবার মত অবস্থা আমার ছিলোনা।খবরটা শুনে ভিষন খারাপ লাগলো। যে মানুষটা কিনা কাল ছিলো আর আজ আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না ফেরার জগতে।প্রার্থনা করি আল্লাহ তাআলা যেন প্রিয় আরজু ভাইকে বেহস্থ নসিব করেন।aaa

বাংলাদেশ ফুটবলের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কিংবদন্তি ফুটবলার আরজু ==================================================

big8

…আরজু দাড়ানো মাঝের সারিতে সবার ডানে…

ক্রীড়া জগতে ৫০ ও ৬০ এর দশকে যেসব রত্ন আমাদের উপমহাদেশে খেলাধুলায় তাদের নৈপুণ্যতায় কোটি কোটি মানুষকে আনন্দ দিয়েছিলো তাদের মাঝে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একজন কিংবদন্তির নাম জনাব ফজলুর রহমান আরজু | যে সব সংগঠকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর তাদের ঘামে আজকের ক্রীড়া জগত সমৃদ্ধ ক্রীড়া জগতে যাদের অবদান এ দেশের ইতিহাস হয়ে আছে, যাদের নাম কেউ কোনদিনই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারবে না, তাদেরই একজন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত জনাব ফজলুর রহমান আরজু | ক্রীড়াবিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে তার অবদানের কথা চির স্মরণীয়, চট্টগামের কাস্টমসে ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে তিনি তার চাকুরীর জীবনে অসংখ ক্রীড়াবিদের কর্মসংস্থান করে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছিলেন | স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ড ঢেলে সাজানোর জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম কথা প্রাক্তন সচিব রশিদ তার একটি বইয়ে বিশদ ভাবে উল্ল্যাখ করেছিলেন | সাভারের জাতীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি আরজুর স্বপ্নের একটি স্বার্থক রূপ | বাংলাদেশের ফুটবলের জগতে এই মানুষটির অবদান ছিল চির স্মরণীয় । পাকিস্তানি মাকরানি খেলোয়াড়দের দাপটে যে কজন বাঙালি খেলোয়াড় ঢাকার মাঠে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন তাদের মাঝে আরজু’র নাম তাদের ভুলে যাবার কথা নয় | স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সে সময় ফুটবলকে সার্থক ভাবে সাজাতে তার অবদান ছিল অপরিসীম, আর সে কারণেই ফুটবল হয়ে উঠে বাংলাদেশের একমাত্র জনপ্রিয় খেলা, ফুটবলে জন্ম নিতে থাকে অসাধারণ সব তারকা। আমার বাবার ক্রীড়া নৈপুণ্যের কথা শুনেছি ১৯৪৯ সালে লীগ চ্যাম্পিয়ন ইপি জিমখানা দলের হয়ে শিরোপা জয়ের পেছনে আরজুর একক নৈপুণ্যের অবদানই ছিল বেশি। ১৯৫১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, ফজলুর রহমান আরজু তখন ওই ক্লাবের খেলোয়াড় । ১৯৫২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় বিজি প্রেস। ১৯৫২ সালেই পাকিস্তানের জাতীয় ফুটবলের আসর বসে ঢাকায়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফুটবল সে সময় ব্যাপক সাড়া জাগায়। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত যারাই আরজুর খেলা দেখেছেন তাদের মুখে শুনেছি আরজু ছিলেন একজন অপ্রতিভে-দ্য ফুটবলার, বল নিয়ে তার ছুটে চলার গতিকে আটকে দেবার মত তখনকার দিনে ঢাকার মাঠে কাউকে দেখা যায়নি। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার লীগ শিরোপা ছিল ওয়াল্ডারার্স ক্লাবের দখলে, আর ওই সময়টার ফুটবলের মাঠে রাজত্ব করে বেড়িয়েছেন আরজু।”৫৩ হতে ”৫৫ এ তিন বছর ওয়াস্ডারার্র চ্যাম্পিয়নের অন্যতম নায়কই ছিলেন আরজু।এরপর ‘৫৬ হতে ‘৫৮ সাল আরজু খেলেন ঢাকা মোহামেডানে। তার নেতৃত্বেই ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো লীগ শিরোপা লাভ করে মোহামেডান। যদিও ’৫১ সালে আরজুর ঢাকা লীগের সূচনাটা ছিলো ওয়ারী ক্লাবের হযে।এর ফাকে আজাদের হয়ে আগাখান গোল্ড কাপও খেলেছিলেন।কলকাতার আইএফএ শীল্ডও খেলেছেন ওয়ারী ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে।

aaaaaaaa

’৫০ দশকের সময়টায় মাকরানী ফুটবলারদের প্রাধান্য ছিলো ঢাকার ফুটবলে।এর মাঝে আরজু তার নৈপূন্যদীপ্ত খেলা উপহার দিয়ে নিজেকে আলাদা ভাবেই তুলে ধরেছিলেন।শুধু তাই নয় অতুলোনীয় খেলা উপহার দেয়ার মাঝে  নিজ যোগ্যতার গুনে পাকিস্তান দলেও যায়গা করে নিয়েছিলেন।এছাড়া বেশ কবছর নিয়মিত খেলেছেন পূর্ব পাকিস্তান দলে।খেলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজ জেলা চট্রগ্রামের হয়ে।চট্রগ্রাম মাঠে কাষ্টম ও  মোহামেডানের হয়ে খেলে সুনামও কুড়িয়েছেন অনেক।খেলা ছেড়ে কোচিংএ ও নিজেকে জড়িয়েছিলেন আরজু।একটা সময় বিকেএসপি এবং চট্রগ্রাম নেভী ও সেনা দলেরও অনারারী কোচ ছিলেন।ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য।জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেছেন।এর বাইরে ফুটবল নিয়ে লেখালিখিও করেছেন বেশ ফুটবলার আরজু।ফুটবলে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে ফুটবলার আরজুকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ সম্মান রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। প্রিয় ফুটবলার আরজু ভাইয়ের ছেলে আমার খুব কাছের ঘনিষ্ট বন্ধু মাহবুব আরিফও একটা সময় চট্রগ্রাম ও ঢাকার ফুটবল লীগে খেলেছিলেন।ঢাকা লীগে আরিফ খেলেছিলেন আজাদ স্পোটিং ক্লাবের হয়ে।


No comments.

Leave a Reply