..আশার আলো জ্বালিয়ে হতাশায় ডুবালো তারকা ব্যাটসম্যানরা..
তাসের ঘরের মতোই ভেঙ্গে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং! কি বলা যায়ে একে? ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যা ? টেস্টের প্রথম দিনেই যেখানে ২৪০ রানে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের লাগাম টেনে ধরা গেছে সেখানে দ্বিতীয় দিনে লক্ষ্য ছিলো একটাই যতোক্ষন পারো ক্রিজে থাকো তারপর জিম্বাবুয়েকে বড়সড় রানের একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইনিংস ঘোষনা করো! অথচ সেই সাজানো চিত্রনাট্যই কেমন তালগোল পাকিয়ে ফেলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে ২৫৪ রানেই! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে অযথা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলো,এটা আত্মহত্যা নয়তো কি?ভাবাই যায়না।মানতেও যেন কষ্ট হয়।অথচ এমনটা হবার কথাও ছিলোনা।
প্রথম টেষ্টর পহেলা দিনেই জিম্বাবুয়ের ইনিংস ২৪০ রানের ভিতর বেঁধে রেখে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ তামিমের উইকেট হারিয়ে ১২ ওভারে তুলে ফেলে ছিলো ২৭ রান।উইকেটে তখন কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ টিমের নির্ভরতার প্রতীক মুমিনুল হক আর অন্য প্রান্তে শামসুর রহমান শুভ । কিন্তু দিনের শুরুটাই যে অশুভ কিছুর ইংগিত দিচ্ছিলো ! আগের দিনে শুভ ৪১ বলে ৮ রান করে ভালো কিছুরেই ইংগিত দিচ্ছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় দিনে আর মাত্র ৯ টি বল খেলেই কোন রান না করেই পানিয়াঙ্গার বলে চিগম্বুরার হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন।দেখে মনে হলো যেন ঘরোয়া লিগের নিয়মিত পারফর্মার ক্যাচ প্রাকটিসেই করালেন !
২৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন রীতিমত ধুঁকছে তখন মুমিনুল-রিয়াদের ৬৩ রানের জুটি যেন বাংলাদেশ টিমের সঞ্জিবনী সুধা হয়েই এলো।সল্পভাষী লাজুক স্বভাবের মুমিনুল একবার সংবাদ সন্মেলনে সাংবাদিকদের বলে ছিলেন ” আমি কথায় মজা দিতে না পারি ব্যাটিংয়ে আপনাদের মজা দিবো “।কথা রাখলেন ঠিক।এদিন ব্যাটিংয়ে মজা দিয়েই তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের ৬ নম্বর ফিফটি ।১১২ বলে, ৫ চারের সাহায্যে ৫৩ রানের ইনিংসটি আবারো যেন ইংগিত দিয়ে গেলো সঠিক পরিচর্যা পেলে সৌরভের ব্যাট টিম বাংলাদেশকে আরো অনেক দিন সৌরভ ছড়াবে। ৫৩ রানের ইনিংসটি আরো বড় হতে পারতো কিন্তু সিকান্দার রাজার সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে সম্ভাবনাময় ইনিংসটির অপমৃত্যু ঐখানেই।মুমিনুলের কি আফছোস হচ্ছে? আলসেমি করে ঢিলে ঢালা ভাবে না দৌড়ে আরেকটু তড়িৎ গতিতে দৌড়ালে যে মূল্যবান উইকেটটির পতন হয়না !
৪০.৩ ওভারে ৯২ রানে বাংলাদেশের ৩ উইকেটে পতন ঘটতেই উইকেটে এলেন সাকিব।আগের দিনেই জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেট নিয়ে প্রমান করে ছিলেন মাঠের বাইরের অনাকাংখিত ঘটনা তার পারফরমেন্সে প্রভাব পড়েনা একটুও।বোলিং পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ভালো কিছু করবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো সবার ।কিন্তু ব্যাট হাতে দিন টি যে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডারের ছিলোনা ।৮ বলে ৫ রান তুলেই তাই দুর্ভাগ্যজনক রান আউট !ওহ ভাবাই যায়না।
অন্য প্রান্তে তখন একপাশ আগলে রেখেছেন রিয়াদ।বিগত দিনগুলোতে পারফরম্যান্স ভালো না হবার কারনে অধিনায়ক মুশফিকের ” ভায়রা ভাই ” বলেই দলে টিকে আছেন বলে চাপা গুঞ্জন ছিলো।সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিতেই যেন বেছে নিয়ে ছিলেন এই ম্যাচটি।১৬০ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে যেন খুঁজে পাওয়া গেলো সেই পুরানো রিয়াদকেই, ভারতের বিপক্ষে ৮নম্বরে যার সেঞ্চুরী দেখে স্বয়ং গাভাস্কার বলে ছিলেন ” ও এতো নিচে ব্যাট করে কেনো ? আমার দেখা সেরা ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান রিয়াদ “।রিয়াদ ৮ নম্বর থেকে টপ অর্ডারে ফিরেছেন, সেই সাথে রানে ও ফিরেছেন।৬৩ রানের ইনিংসটিকে বড় করতে না পারার আক্ষেপ থাকতেই পারে।তবে ৭টি চার আর বড় বড় দুটি ৬ মেরে যেন বুঝিয়ে দিলেন দু:সময়কে যেকোন মূল্যে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চান।তবে একটা সামন্য ভুল যে বড় অর্জনকেও ম্লান করে দিতে পারে এর উদাহরন যেন ষ্ট্যাম্পের বলকে আলতো করে লেগে ঘুরিয়ে মারতে গিয়ে রিয়াদের এলবিডব্লিউ হওয়া ! কোন প্রয়োজনই ছিলোনা ওসময়টায় এমন ভাবে ব্যাট চালানো।সোজা ব্যাটে ডিফেন্স করলেই বেঁচে যেতে পারতেন এবং ড্রেসিং রুমেও ফেরা হতনা।যা দলের বড় উপকার বয়ে আনত।
মুশফিক যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফর্মটিই টেনে নিয়ে আসলেন।ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেঞ্চুরী করে টিমের “ওয়ান ম্যান আর্মি ” ছিলেন।এদিন ও ১২৬ বলের ৬৪ রানের ইনিংসটিও যেন ভালো কিছুরেই আভাস দিচ্ছিলো ।কিন্তু উচু হয়ে বুক বরাবর আসা বলকে অযথাই পুল করতে গিয়ে পানিয়াঙ্গার বলে আরভিনের হাতে ধরা পড়লেন ।হলো কি নিজেতো হতাশায় ডুবলেনই সাথে সবাইকে ডোবালেন।দেখে শুনে বলকে ছেড়ে দিলেই দলকে এমন বিপদে ফেলা হতনা।বাংলাদেশ ২২৬/৭।বাকি টুকু শুধুই হতাশার গল্প !
২২৬/৭ থেকে ২৫৪/১০ ,বাকি ৩ ব্যাটসম্যান মিলে ২৮ রান তুলতেই অল আউট বাংলাদেশ ! শুভাগত হোম কে সাম্প্রতিক সময়ে অল রাউন্ডারেই ভাবা হয় ।দল যখন উইকেট হারিয়ে আইসিউতে তখন তার একটি ভালো ইনিংস হতে পারতো দলের সঞ্জিবনী সুধা।কিন্তু কোথায় কি? ব্যাটিং দেখে যে কারো মনে হবে তার যেন ট্রেন ধরার তাড়া ছিলো ।অযথাই তুলে মারতে গিয়ে আউট হওয়ায় তিনি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পেরেছেন কিনা কে জানে ?
টেল এন্ডারে বুক চিতিয় একাই লড়ে গেলেন তাজুল ।তার ৪৬ বলে ১৮ রানের ইনিংসটি হয়তো খুব বড় নয় তবে সময়ের দাবী মেনে তা অনেক বেশি কার্যকরী।বলতেই হয় তাইজুলের ব্যাটিংয়েই ২৪০ রান টপকানো সম্বপর করেছে।
দিনের সবচেয়ে বিনোদনটা মনে হয় শাহদাত হোসেন রাজীবই উপহার দিয়ে গেলেন। যেন শপথ করেই নেমে ছিলেন ” যে কোন মূল্যেই আমাকে নিজের রান আউট হওয়াটা না নড়ে চড়ে এক যায়গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতেই হবে”।দেখলেন আর দারুন ভাবে লজ্জা দিয়ে গেছেন। টিমে ছিলেন না দীর্ঘ দিন।সমস্যা হিসেবে বারবার নিজের ফিটনেস সমস্যার কথাই বলেছেন।প্রত্যাবর্তনের এই সিরিজ তাই তার জন্য অগ্নি পরীক্ষাই।তা কতোটুকু উত্তীর্ন হলেন সেই পরীক্ষায়।আয়েসি ঢংয়ে এক যায়গায় দাড়িয়ে রান আউট হওয়া দেখে যে কেউ ই বলবে ” টেস্ট খেলার মত এখনো ফিটনেস আসেনি শাহদাতের “।
মিরপুরের উইকেট প্রথম দিন ছিলো স্পিনারদের রাজত্ব, দ্বিতীয় দিন পেসারদের, তৃতীয় দিন কি আচরন করে কে জানে?
জিম্বাবুয়ের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে অনেক তারকা খেলোয়াড়কেই খেলানো হয়নি।এ সম্পর্কে নির্বাচক ফারুকের বক্তব্য ছিলো ” অনেকটা রহস্য রাখতে কৌশলগত কারনেই তারকা খেলোয়াড়দের খেলানো হয়নি “।প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে যেন একটি প্রশ্নেরেই জন্ম দিলো ” প্রস্তুতি ম্যাচে তারকা খেলোয়াড়দের না খেলানো কি বিসিবির ভুল ছিলো ? প্রস্তুতির ঘাটতিকি তাদের থেকে গেলো না “?
বিসিবির সিদ্ধান্ত কি তবে বুমেরাং হয়ে বাংলাদেশ টিমে ফিরে এলো ?
Saleque Sufi
Oct 26. 2014
Absolutely spot on Kiron. I hope Bangladesh Batsmen will learn lessons from their mistakes . In fourteen years of playing test cricket their wisdom teeth have not grown. No one knows how to build their innings .Scoring a fifty appears to be their aim and objective . The team has little or no game plan , no mentoring .The role of team management and captains briefing are not visible .