…চলে গেলেন এক সময়ের দেশ সেরা বোলার শ্রদ্বেয় ক্রিকেটার প্রিয় মাসুদ ভাই…

…আমার ভাল লাগার খুব প্রিয় এক মানুষ ছিলেন তিনি…ছিলেন প্রিয় ক্রিকেটার…১৯৭৮ সালে পাবনা থাকার সময় হতেই তার সাথে পরিচয়…ক্রিকেট লীগ খেলার কারনেই যেন সখ্যতা গড়ে উঠে বেশী…খুব স্নেহ করতেন আমাকে…বাবার চাকুরীর সূত্রে পাবনা হতে চলে যাওয়া হয় চট্রগ্রামে…তবে যোগাযোগ থেমে থাকেনি…চিঠিতে যোগাযোগ রাখতাম…তিনিও রিপ্লাই দিতেন…মনে পরে ১৯৭৯ সালে যখন আইসিসি খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন তখন হোটেলে বসেই চিঠি লিখে পোষ্ট করেছিলেন আমাকে…দেশে ফেরার সময় গিফট ও নিয়ে এসেছিলেন…কথা বার্তায় চলনে বলনে যেমন ছিলেন স্মার্ট ও ষ্টাইলিশ তেমনি ছিলেন অতি বিনয়ী-শান্ত ভদ্র-অমায়ীক হাসিখুশি মুডের সদা হাস্যোজ্জল…ছিলেন প্রচার বিমুখ…ছোট-বড় করে কাউকে আলাদা করে দেখা হতনা তার..সবাইকেই সম্মান করে চলতেন…দেখা হতেই আমার আগেই সালাম দিয়ে দিতেন তিনি…শ্রদ্বায় মাতা নত হয়ে আসত…তার মত ভাল মনের মানুষ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে কমই আছে বলা যায়…বলছিলাম সত্তর আশি দশকের মাঠ কাঁপানো ও এক সময়ের জাতীয় দলের দেশ সেরা পেস বোলার দীর্ঘকায় জিয়াউল ইসলাম মাসুদ ভাইয়ের কথা…

…সেই প্রিয় ক্রিকেটার মাসুদ ভাই আজ ২৭ জুলাই রোববার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আমাদের ছেড়ে চীর বিদায় নিয়েছেন(ইন্না লিল্লাহে…রাজেউন)…৬৫ বছরের মাথায় মাসুদভাই চলে গেলেন না ফেরার জগতে…হঠাৎ করে মাসুদ ভাইয়ের চলে যাওয়াটা সত্যি কষ্টের…তবে স্মৃতির মনি কোঠায় থাকবেন জাগ্রত তা বলতেই হয়…মাসুদ ভাই কাঁদিয়ে যেন চলে গেলেন…নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে…চীর বিদায় নেয়ার পর তাকে নিয়ে আমার সাইটে লিখতে বসেছি বলে…ক্ষমা করবেন মাসুদ ভাই…দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে শান্তিতে রাখুক…বেহেস্থ নসীব করুক…আমিন..

…কদিন আগের এক ঘটনা এখানে না তুলে পারছিনা…গিয়েছিলাম আমাদের ক্রিকেটের আরেক প্রিয় মুখ অনেকেরই ভাল লাগার এক মানুষটির বাসায়…পুরানো দিনের ক্রিকেট স্মৃতির পাঁতা উল্টাতে গিয়ে চলে আসে সেই ১৯৭৯ তে বাংলাদেশ যখন প্রথম বারের মত আইসিসি  খেলতে যায় ইংল্যন্ডে সেই স্মৃতির কথা…বলছিলেন.. তখন আমি ছাত্র…ওসময়টায় হাত খরচ ছিলো খুবই সীমিত…আমার থাকা হত লন্ডনে আর বাংলাদেশ দলের খেলা হত বামিংহামে…যা ছিলো অনেক দূরের পথ…তবে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করব ভাবতেও পারিনি…অনেক কষ্ট করেই যেন ট্রেন-বাস-পাঁয়ে হেটে দূর পথে ছুটে যেতাম খেলা দেখার জন্য…একদিন বাংলাদেশ দলের এক খেলোয়াড় আড়ালে ডেকে নিয়ে বল্লেন আপনি এত কষ্ট করে দুর হতে আসা যাওয়া করে কেন খেলা দেখবেন এক কাজ করুন আমার হোটেল রুমেই থেকে যান…অবাক হলাম তার কথা শুনে…বল্লাম ব্যাপারটা কি ঠিক হবে…বল্লেন কিছুই হবেনা..কেউ জানবেনা…থাকেন খুশি হব…ভাবতেও পারিনি মানোবিক দৃষ্টিকোন থেকে এগিয়ে এসে সহানুভুতি দেখিয়ে তিনি এভাবে আমার জন্য এমন একটা কাজ করবেন…মুগ্ধ না হয়ে পারলামনা তার সহানুভুতি প্রকাশে…অতঃপর ছেলে মানুষী অচেতন মনে ভাল মন্দ না বুঝেই কেন যানি রাজিও হয়ে গেলাম মাসুদ ভাইয়ের বিশেষ অনুরোধে…তবে রাত্রে যখন ঘুমাতে যাব তখন আরো বিস্মিত হলাম…অবাকই হলাম…ভাবতেই পারিনি তিনি এমন উদার মনোভাবের ও বড় মনের পরিচয় দেবেন…দেখি উনি হোটেল রুমের ফ্লোরে শুয়ে আমাকে বল্লেন বেডে ঘুমাতে…আমিতো আকাশ হতে পড়লাম…এ কি করে সম্ভব…এতটা ভাল মনের মানুষ দেখে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পরি…কল্পনাতেও ছিলোনা …

…পাঠক বড় মনের সেই ভাল মানুষটি আর কেউ নয় আমার অনেক প্রিয় মাসুদ ভাই…ওদিকে সেদিনের সেই ছাত্রটি যাকে মাসুদ ভাই আন্তরিক ভাবেই হেলপ করেছিলেন তিনি হলেন এমহুর্তের ক্রিকেট বোর্ড পরিচালক আমাদের সবার প্রিয় ববি ভাই…কথা প্রসঙ্গে ববি ভাই আরো উল্লেখ করলেন মারা যাবার আগ পর্যন্ত মাসুদ ভাই ক্রিকেট বোর্ডে কর্মরত ছিলেন…সেই সূত্রে যখন-তখন…যেখানে-সেখানে স্যার সম্বোধন করেই কথা বলতেন…ব্যাপারটা মোটেও ভাল লাগার মত ছিলোনা…শত অনুরোধ করেও বদলানো যায়নি…
এই হলো প্রিয় মাসুদ ভাই…খেলায় শুধু নয় আচোরনেও মাসুদ ভাই ছিলেন সবার অতি প্রিয় মানুষ আর আপনজন…বলতে হয় পরিচিতজন সবার মনের গভীরেই ঠাই করে নেন মাসুদ ভাই…মাসুদ ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই তবে থাকবেন অন্তর জুড়ে তা না বল্লেই নয়…

…মাসুদ ভাইয়ের জম্ন রাজশাহীতে…পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ওখানেই বড় হয়ে হয়েছেন…তার ক্রিকেট হাতে খড়ি পাবনাতেই…রাধানগর পল্যানপুর ক্লাবেই শুরু লীগ খেলা…সত্তর দশকের শুরুতে যোগ দেন ঢাকা লীগের ওয়ান্ডার্রাস ক্লাবে…সেই শুরু উত্তানের…তবে বলতে হয় আজাদ বয়েজ ক্লাবে যোগ দিয়েই ক্রম্বানয়ে ভাল খেলে নিজেকে প্রতিষ্টিত করে বাংলাদেশ দলেও সুযোগ করে নেন…বলব নিজ যোগ্যতার গুনেই মাসুদ ভাই নিজেকে অনেক উপরে তুলে ধরেন…ওসময়টায় এমসিসি-হায়দ্রাবাদ ব্লুজ দলের বিরুদ্ধে তিন দিনের বেসরকারী টেষ্ট সহ একদিনের ম্যাচ খেলে সুনাম কুড়ান…অতঃপর ইংল্যান্ডে অনুষ্টিত ১৯৭৯-র আইসিসি ট্রফিতে প্রথম বারের মত জাতীয় দলের ব্লেজার গায়ে জড়ান…খেলেছেন হংকংএ অনুষ্টিত সাউথ ইষ্ট এশিয়া কাপেও…লীগ জীবনের শেষের ক মরসুম খেলেছেন মোহামেডানের হয়ে…

…মাসুদ ভাই ছিলেন দলের সূচনাকারী দ্রুতগতির পেস বোলার…তার বোলিং ষ্টাইলটাই ছিলো যেন একটু ভিন্ন ধাচের…ওপেন চেষ্টে বল ছুড়তেন…সে সময় ম্যাটিং উইকেটে মাসুদ ভাইয়ের দ্রুতগতির বল গুলো যেন ব্যাটসম্যানদের রীতিমত কাঁপুনি ধরাতো…এতে করে প্রতি ম্যাচেই তার ঝুলিতে জমা পড়ত একাধিক উইকেট…

…মাসুদ ভাইকে একজন ফাষ্ট বোলার হিসেবেই জানেন অনেকেই…বোলার হিসেবেই খ্যাত ছিলেন তিনি…তবে ব্যাটিংটাও ভাল করতেন…মনে পড়ে ১৯৭৯ মরসুমে ইংল্যান্ডের এমসিসি দল খেলতে এসেছিলো বাংলাদেশে…নিজের পরিচিত মাঠ রাজশাহীতে তিন দিনের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে দলের চরম বিপর্যয়ের মুখে সর্বোচ ৩৩ রান তুলে দলের বিপদই কাটাননি খেলা ড্র করতে মূখ্য ভুমিকা রেখেছিলেন…পরের ম্যাচে চট্রগ্রামেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছিলেন মাসুদ ভাই…মূল্যবান দুউইকেট নেয়ার পাশাপাশি ৩০ রান তুলে নেন…এর বাইরে ঢাকা লীগে মাসুদ ভাইয়ের সেঞ্চুরী হাঁকানোর কথা অনেকেরই অজানা…১৯৭৮ মরসুমে ওয়ান্ডারার্সের হয়ে উদিতির বিরুদ্ধে অপরাজিত শতরান হাঁকিয়েছিলেন মাসুদ ভাই…

………………………….মাসুদ ভাইকে নিয়ে কজনার মন্তব্য……………………………

5 Responses to “…চলে গেলেন এক সময়ের দেশ সেরা বোলার শ্রদ্বেয় ক্রিকেটার প্রিয় মাসুদ ভাই…”

  1. Saleque Sufi

    Jul 27. 2014

    Well composed . Great tribute to a wonderful person, perfect gentleman cricketer. I hope present generation of cricketers and future generation will try to take a leaf out of his life as a cricketer.

    Reply to this comment
  2. admin

    Jul 27. 2014

    ..tnx Saleque Sufi bhai for nice comments…

    Reply to this comment
  3. Maruf Reza Khan Sunny

    Jul 29. 2014

    Masud sir our role model…Allah apnak janat nosib korben…..
    Ameen

    Reply to this comment
  4. Sazzad Masud Dabbu

    Aug 02. 2014

    Thank you all.
    From
    Sazzad Masud Dabbu(son)
    Nehan & Yohan Masud ( grandsons)
    Canberra, Australia

    Reply to this comment
  5. reashad rahman

    Aug 12. 2014

    Thanks a lot – to the admin
    from
    Reashad Rahman (nephew of K Z Islam Masud)

    Reply to this comment

Leave a Reply