১৯৭৩ সালে যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের পথ চলা শুরু হয়েছিলো
…কৃতজ্ঞচীত্তেই স্মরন করছি ওপরের ছবিটার ভাললাগার প্রিয় মানুষ গুলোকে…যাদের হাত ধরেই লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবল মাঠের লড়াইয়ের পথ চলাটা শুরু হয়েছিলো…বলছিলাম আজ হতে ৪৫ বছর আগে ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা টুর্নামেন্টে খেলা প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের তারকা ফুটবলারদের কথা…সেবার জাতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ লাভ করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ৪জন,আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ২জন,অফিস দল বিআইডিসির ৩জন,অফিস দল ওয়াপদার ৪জন,ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ২জন,ইষ্টএন্ড ও রহমতগঞ্জের ১জন করে খেলোয়াড়…কোচ সাহেব আলীর তত্তাবধানে গড়া ১৭ সদস্যের জাতীয় দলে স্থান পাওয়া খেলোয়াড়রা হলেন মোহামেডানের স্টপার ব্যাক জাকারিয়া পিন্টু-মিডফিল্ডার মো: কায়কোবাদ-রাইট উইঙ্গার প্রতাপ শংকর হাজরা-ডিফেন্ডার মনোয়ার হোসেন নান্নু-আবাহনীর স্ট্রাইকার কাজী সালাউদ্দিন তুর্য-স্টপার ব্যাক শেখ আশরাফ আলী-বিআইডিসির লেফট ব্যাক আবদুল হাকিম-স্টপার নাজির আহমেদ চৌধুরী-স্ট্রাইকার এনায়েতুর রহমান এনায়েত-ওয়াপদার স্ট্রাইকার নওশেরুজ্জামান নওশের-স্ট্রাইকার সুনিল কৃষ্ণ দে-স্টপার ব্যাক দিলীপ কুমার বড়ুয়া-মিডফিল্ডার শরিফুজ্জামান-ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের গোলকিপার শহিদুর রহমান শান্টু-রাইট ব্যাক ফারুকুজ্জামান ফারুক-ইষ্টএন্ডের লেফট আউট ফিরোজ-রহমতগঞ্জের গোলকিপার মোতালেব…প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহামেডানের অভিজ্ঞ ফুটবলার দক্ষ স্টপার ব্যাক জাকারিয়া পিন্টু…প্রথম জাতীয় দলটার মোট ৮জন ফুটবলার ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়…এরা হচ্ছেন জাকারিয়া পিন্টু-আশরাফ-হাকিম-এনায়েত-সালাউদ্দিন-প্রতাপ-কায়কোবাদ ও নওশের…প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলারদের মধ্যে আজ আর আমাদের মাঝে নেই ৪জন…এরা হলেন মরহুম মোতালেব-ফারুক-দিলীপ-নান্নু…
… ‘৭৩ সালে প্রথম জাতীয় দল গঠনের কাজটায় বড় রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো নির্বাচকরা…প্রথম দফায় জাতীয় দলে ইষ্টএন্ডের মাঝমাঠের খেলোয়াড় আলমগীরকে সুযোগ দিয়ে তালিকা ঘোষনা দিয়েছিলেন নির্বাচকরা…যে তালিকা পত্রপত্রিকায় ছাপাও হয়ে যায়…অথচ কোন কারন ছাড়াই হুট করে আলমগীরকে বাদ দিয়ে ওয়াপদার মিডফিল্ডার শরিফকে দলে টেনে নেন নির্বাচকরা !! মজার ব্যাপার শরিফকে প্রথম অবস্থায় স্ট্যান্ড বাই তালিকাতেও রাখেননি নির্বাচকরা…জাতীয় দলের মুল স্কোয়াডের বাইরে স্ট্যান্ড বাই তালিকায় অন্তভুক্ত ছিলেন হলো ওয়াপদার গোলকিপার ফজলুল করিম-আবাহনীর সাইড ব্যাক জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা-বিআইডিসির স্টপার জহুরুল-আবাহনীর উইঙ্গার অমলেশ ও মোহামেডানের উইঙ্গার ওয়াজেদ গাজী…সেবছর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গাজীকে দলে স্থান না দিয়ে অফ ফর্মে থাকা নওশেরের মুল দলে সুযোগ লাভটা নিয়েও বেশ সমালোচনা করে লেখালিখিও হয়েছিলো দৈনিক পত্রিকায়…তেমনি সমালোচিত হয় ব্যাক বাদশার সুযোগ না পাওটা নিয়েও…এখানে উল্লেখ্য যে ফুটবলার এই বাদশাই হলেন এক সময়ের জাতীয় ক্রিকেট দলের খ্যাতিমান চৌকস ক্রিকেটার বাদশা…যিনি দেশের ক্রিকেটারদের মাঝে প্রথম বিশ্ব একাদশে খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন…প্রথম বাংলাদেশ দলের চীফ ডি মিশন হয়ে দলের সাথে গিয়েছিলেন সালাউদ্দিন ইউসুফ এবং ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন এন.এ.চৌধুরী…
… ‘৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল মালয়েশিয়ার মারদেকা টুর্নামেন্টে প্রথম বারের মত খেলতে গিয়ে নৈপূন্যদীপ্ত লড়াকু খেলা উপহার দিয়ে বলতেই হয় মন কেড়েছিলো সবার…যদিও দলটা ভাল কোন প্রস্ততি ছাড়াই খেলতে গিয়েছিলো…স্মৃতিচারন করতে যেয়ে দলের আক্রমনভাগের কুশলী ফুটবলার প্রতাপ শংকর হাজরা বলেন ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বছরের শেষ দিকে এসে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের পতাকার বাংলাদেশ…’৭২ সালে যদিও ফুটবল মাঠে গড়ায় তবে লীগ আসরটা অসমাপ্তই থেকে যায়…সে সময়টায় ছিলোনা কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধা…এমনতর অবস্থায় ‘৭৩ সালের জুলাই মাসে স্বল্প সময়ের অনুশীলন শেষে জাতীয় দলটা খেলতে যায় মালয়েশিয়ায়…মারদেকা আসরে মোট ৬ খেলার মাঝে বাংলাদেশ দল ১টিতে জয় ও ২টিতে ড্র করেছিলো…আর লড়াই করেও হেরেছিলাম আমরা অপর তিন ম্যাচে…বলব ভাল লড়াই করে খেলেও কটি খেলায় আমরা জয়ের দেখা পাইনি…গোলের প্রাপ্ত সুযোগ গুলো কাজে লাগাতে পারলে আমরা জয়ের মুখ দেখতে পারতাম…
…এখানে স্মরনযোগ্য যে মালয়েশিয়ার মারদেকা আসরে প্রথম বারের মত মাঠের লড়াইয়ে নেমে পিন্টুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলটার মুল একাদশ সাজানো হয়েছিলো শান্টু-জাকারিয়া পিন্টু-হাকিম-আশরাফ-নাজির-কায়কোবাদ-নান্নু-এনায়েত-সালাউদ্দিন-প্রতাপ ও নওশেরকে নিয়ে…মারদেকা টুর্নামেন্টের প্রথম খেলাতেই বাংলাদেশ দল খ্যাতিমান তারকা স্ট্রাইকার এনায়েত ও সালাউদ্দিনের গোলের সুবাদে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা ২-২ গোলে সমতা রেখে ট্রাইবেকারে গিয়ে ৩-২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়ের স্বাদ নিয়েছিলো…ট্রাইবেকারে এনায়েত-সালাউদ্দিন গোল করতে না পারলেও হাকিম-কায়কোবাদ ও আশরাফ গোল করে দলকে জয় এনে দেয়…পরের ম্যাচেও নান্নুর দেয়া গোলের কৃতিত্বে বাংলাদেশ দল ১-১ গোলে ভিয়েতনামের সাথে ড্র করে মাঠ ছেড়েছিলো…তৃতীয় খেলায় গিয়ে বাংলাদেশ দল লড়াকু খেলা উপহার দিয়েও কটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে ১-২ গোলে হেরে যায় কুয়েতের কাছে…দলের একমাত্র গোলটি এসেছিলো এনায়েতের কাছ থেকে…চতুর্থ ম্যাচে সালাউদ্দিনের গোলের সুবাদে বাংলাদেশ দল ১-১ গোলে ড্র করেছিলো সিঙ্গাপুরের সাথে…পরের খেলায় বার্মার বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ দল…হেরে যায় ০-৬ গোলে…আর শেষ স্থান নির্ধারনি খেলায় থাইল্যান্ডের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ দল ০-২ গোলে…সেবার মারদেকা আসর শেষে ফেরার সময় সিঙ্গাপুরে দটো প্রীতি ম্যাচ খেলে দেশে ফিরেছিলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল…সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল তাদের প্রথম খেলায় কুশলী তারকা স্ট্রাইকার সালাউদ্দিনের গোলের কৃতিত্বে ১-০ গোলে জয়ের স্বাদ নিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে গিয়ে ০-২ গোলে হেরে মাঠ ছেড়েছিলো…
Recent Comments