জাতীয় দলের ৫ তারকা ফুটবলার ও ১ ক্রীড়া লেখকের সম্বনয়ে গড়া দল নিয়েই ’৭৭ সালে মোহামেডানের প্রথম ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়

                                   …স্মৃতির পাঁতায় ১৯৭৭-৭৮ মরসুমে মোহামেডানের প্রথম ঢাকা ক্রিকেট লীগের শিরোপা জয়…১৯৭৩ সালে লীগ শুরু হলেও তা শেষের মুখ দেখেনি কোন এক কারনে…১৯৭৪-৭৫ মরসুমে প্রথম ঢাকা ক্রিকেট লীগ শিরোপা ঘরে তুলে নিয়েছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের আবাহনী ক্রীড়া চক্র দলটি…শেখ কামাল ছিলেন চ্যাম্পিয়ন আবাহনী দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়.. পেস বোলার শেখ কামালই আবাহনীর বোলিং সূচনা করতেন…পরের মরসুমে চ্যাম্পিয়নের স্বাধ নেয় ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব…১৯৭৭-৭৮ মরসুমে ফের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো আবাহনী দলটি…অতঃপর ১৯৭৭-৭৮ মরসুমে দলনায়ক ফারুকের যোগ্য নেতৃত্বে প্রথম বারের মত লীগ চ্যাম্পিয়নের স্বাদ নেয় ঢাকা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব…

                                       …৪দিন ব্যাপি ফাইনালে আবাহনীর বিরুদ্ধে নাটকীয়তায় ভরা ও তীব্র উত্তেজনাকর ফাইনালের ২৪ রানের ব্যাবধানে মোহামেডানের স্মরনীয় জয়ের মূল নায়কই ছিলেন দক্ষ পেসার দীর্ঘকায় সাজু…প্রথম ইনিংসে সর্বোচ ৫ উইকেট এবং ২য় ইনিংসে দলের বিপদের মহুর্তে দায়িত্বশীল অর্ধশত(৫১) রান ও মূল্যবান ৪ উইকেট দখল করে মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন হতে মূখ্য ভুমিকাটি রাখেন সাজু…তবে পুরো মরসুমে ভাল খেলেই মোহামেডানকে ফাইনালে টেনে তুলতে সাহায্য করেছেন ওপেনার বাচ্চু-রকিবুল হাসান-সেলিম ও মাইনু ভাতৃদ্বয়-দৌলত-মনজু-ওয়াহিদ-নওশের-সাজু…সেবার সাদা কালো জার্সী গায়ে জড়িয়ে মাঠ মাতানো জাতীয় ফুটবল দলের ৫ খ্যাতিমান তারকা ফুটবলার ও এক ক্রীড়া লেখক নিয়ে গড়া মোহামেডানের শিরোপা জয় করার ঘটনা আলাদা ভাবেই তুলে ধরতে হয়…৫ ফুটবলাররা হলেন শান্টু-বাটু-নওশের-প্রতাপ হাজরা ও টিপু…আর ক্রীড়া লেখকটি ছিলেন সালেক সুফি…ক্রিকেটার শান্টু ও নওশের ছিলেন দক্ষ অল রাউন্ডার…এরমাঝে শান্টু জাতীয় দলের ট্রায়াল ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন…শুধু কি তাই জাতীয় দলের মূল ১৪ জনের স্কোয়াডের বাইরে থাকা দুজন ষ্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটারের একজন ছিলেন চৌকস ক্রিকেটার ছিলেন সে সময়ের মোহামেডানের দেশ সেরা গোলকিপার শহিদুর রহমান শান্টু…

                                       …আকর্ষনীয় ও তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন ফাইনাল খেলায় প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯৩ রানের মাথায় যখন মোহামেডান দলটি অল আউট হয়ে যায় তখন অনেকেই ভাবতে পারেনি খেলায় ফিরতে পারবে দলটি…ধরেই নেয়া হয় ফলাফল বুঝি আবাহনীর অনুকুলেই হয়ত যাবে…তবে সাজুর ক্ষুরধার বোলিং নৈপূন্যের সুবাদে ভাল ভাবেই খেলায় ফিরে আসে মোহামেডান…মূলত দুই বাঁহাতি বোলার পেসার জালাল ইউনুস(১৩-৪-২৭-৪) ও লেগ স্পিনার ওমর খালেদ রুমির(৭-২-২০-৪) বোলিংয়ের তোপের মুখেই মোহামেডানের প্রথম ইনিংম মাত্র ৯৩ রানে  ‍গুটিয়ে যায়…মনজু(১৬),সেলিম(১৬),শান্টু(১৯),দৌলত(অপঃ১৩) ছাড়া কেউই দুঅন্কের রান তুলতে পারেনি…অন্যদের মাঝে রকিবুল ০,ফারুক ৭,নওশের ৮,ওয়াহিদ ২,সাজু ৫,বাটু ০,প্রতাপ ১ রান তুলতে সক্ষম হন…ওদিকে খুশি মনে ব্যাট করতে নামলেও শান্টু (১৬-৮-১৬-৪) ও সাজুর (২৩.৪-৫-৪২-৫) দুধর্ষ বোলিংএ আবাহনীর ব্যাটিংএ চরম ধ্বস নেমে আসে…১১০ রানের মাথাতেই ইনিংস শেষ হয়ে যায় তাদের…আলিউল(২০)-বেলাল(অপঃ৩৪)-বাবু (১৪) ও তামিম (১৪) কিছুটা দৃড়তা দেখালেও বাকিরা ছিলো আসা যাওয়ার মাঝে মগ্ন…এদের মাঝে নওয়াব ৩,রুমি ৪,দীপু ৬,রিজভী ১,শাহ ০,জালাল ১,আযম ০ রানে ফিরে যান…

                                     …দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মোহামেডান তাদের ইনিংস শেষ করে ২০৯ রানের মাথায়…এতে করে আবাহনীর জয়ের জন্য ১৯২ রানের টার্গেট দাড় করায় মোহামেডান…প্রথম ইনিংসে বল হাতে জ্বলে উঠা বোলার সাজু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে দারুন চমক দেখাবেন ভাবাই যায়নি…দলের বিপদের মহুর্তে ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মনমাতানো অর্ধশত রান হাকিয়ে রীতিমত তাক লাগান সাজু…৪৬ মিনিট ব্যাটিং করে ৫টি বাউন্ডারি ও দুটি দর্শনীয় ছক্কার মার মেরে সাজু সর্বোচ ৫১ রান তুলে রিজভীর বলে জালালের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে  বিদায় নেন…এছাড়া রকিবুলের ১৮০ মিনিটের ধর্ষ্যশীল ইনংসের ফসল ৩৭ রান এবং দৌলতের দৃড়তাপুর্ন ২২ ছাড়াও মনজুর ১৫,ফারুকের ১৭,শান্টুর ১২ ও অতিরিক্ত ৩২ রানের সুবাদে মোমেডান ২০৯ রান তুলতে সক্ষম হয়…অন্যদের মাঝে নওশের ২,সেলিম ৬,বাটু অপঃ ৬,প্রতাপ ৮,ও ওয়াহিদ ১ রান তোলেন…প্রথম ইনিংসের ন্যায় ২য় ইনিংসেও বল হাতে তাক লাগান আবাহনীর জালাল(১৮-৬-৩৯-৫)…দুইনিংসে তার সংগ্রহে জমা থাকে সর্বোচ ৯ উইকেট…এছাড়া দীপু ও রুমি ২টি করে এবং আযম ১টি উইকেট দখল করেন…

                                          …দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য মাত্র ১৯২ রানের টার্গেট মাথায় রেখে ব্যাট করতে নেমেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবাহনী…তৃতীয় দিন শেষে তাদের রান দাড়ায় ৫ উইকেটে মাত্র ৬২ রান…অতঃপর ৮ ব্যাটসম্যানের (নওয়াব ১০,আলিউল ৫,রুমি ০,বাবু ৯,শাহ ৫,আযম ২,দীপু ০,জালাল অপঃ ৫) ব্যার্থতার পরও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বেলাল (৪৩) এবং ৮ ও ১০ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা তামিম (৩২) ও রিজভীর (৫১) দৃড়তাপুর্ন ব্যাটিংয়ের কল্যানে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ১৬৮ রানে অল আউট হয়ে শেষ রক্ষা আর করা হয়ে উঠেনি আবাহনীর…ফলে ২৪ রানে জয়ের স্বাধ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তুলে নেয় মোহামেডান…দ্বিতীয় ইনিংসেও বোলিং সফলতার পরিচয় দিয়ে মোহামেডানকে শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখেন দুই বোলার সাজু (৪/৩৮) ও শান্টু(৩/৫৩)…এছাড়া দৌলত ও ফারুক একটি করে উইকেট নিয়ে কৃতিত্ব দেখান…ফাইনালে ৯ উইকেট (৫+৪) এবং ৫৬ রান(৫১+৫) সংগ্রহ করে প্রশংসনীয় চৌকস নৈপুন্যের সাক্ষনর রেখে ম্যাচ সেরা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন সাজু…খেলা শেষে দুদলের মাঝে পুরস্কার বিতরন করেন প্রধান অতিথি জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন সংস্থার সভাপতি মেজর জেনারেল এরশাদ…অনুষ্টানে লীগের সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান রকিবুল হাসান (৩৪৪) ও সর্বাধিক উইকেট শিকারী ওয়াহিদুল করিম বাবু কে (৩৭ উইকেট) বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করা হয়…

2 Responses to “জাতীয় দলের ৫ তারকা ফুটবলার ও ১ ক্রীড়া লেখকের সম্বনয়ে গড়া দল নিয়েই ’৭৭ সালে মোহামেডানের প্রথম ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়”

  1. Manjoor Milki

    Jul 18. 2014

    Modhur Smriti.

    Reply to this comment
  2. didar

    May 25. 2016

    ভালো লাগলো কিরান ভাই। আপনিতো তখন লিখতেন ও।আপনার সে সময়ের নিউজ গুলো দেন।

    Reply to this comment

Leave a Reply