”আ”-তে আটকে আছে আমাদের অসাধারন রের্কড গুলো

 

…অবাক হতেই হয়…”আ”-তে আটকে আছে আমাদের অসাধারন রের্কড গুলো…যার মাঝে কিনা দু দুটো বিশ্ব রের্কড…”আ”-র মাঝেই ইতিহাস..এবং অভিষেকেই ১০০ রানের ঐতিহাসিক নজীড়..
টেষ্ট ক্রিকেটের আসরে শুরুটা করেছিলেন আমিনুল..তারপর আশরাফুল..অতঃপর আবুল..এরমাঝে আশরাফুল ও আবুলতো রীতিমত বিশ্ব রের্কডের পাতায় নিজেদের নাম লিখিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় যেন আলোড়নের ঝড় তুলেছেন..আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাংলাদেশের টেষ্ট ক্রিকেটের সুচনাতেই করেছিলেন মনমাতানো ১৪৫ রান..যা ডেবু টেষ্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ রানের রের্কড হয়ে আছে..

এরপর শ্রীলংকায় জীবনের প্রথম ঠেষ্টেই এক অসাধারন বিশ্ব রের্কড সৃষ্টি করে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই যেন তাক লাগান আশরাফুল..১৭ বছর ৬১ দিনের মাথায় টেষ্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ব কনিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরান হাকিয়ে চমক দেখান আশরাফুল..তার ব্যাট থেকে আসে দৃষ্টিনন্দন ১১৪ রান..বিশ্বখ্যাত স্পিনার মুরালীর বিরুদ্বে সেদিনের তরুন আশরাফুল যে ভাবে দাপটের সাথে পিটিয়ে খেলে শতরানটি হাঁকান তা ছিলো দেখবার মত..পাকিস্তানের মোস্তাক মোহাম্মদের রের্কডটি নিজের করে নিয়েছিলো আশরাফুল..মোস্তাক ১৯৬১ সালে ১৭ বছর ৭৮ দিনে ভারতের বিরুদ্বে করেছিলেন শতরান..২০০১ সালে গিয়ে আশরাফুল লংকার বিরুদ্বে ১৭ বছর ৬১ দিনে গিয়ে নয়া রের্কড গড়েছিলেন..

এরপর আবুল হোসেনের পালা..সফরকারী ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্বে ঢাকায় ১ম টেষ্টে শাহদত তেমন একটা সুবিধা করতে না পারায় খুলনায় দ্বিতীয় টেষ্টেই খেলার সুযোগটি পেয়ে যান তরুন বোলার আবুল..জীবনের প্রথম টেষ্টে যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন আবুল দলের তখন খুবই নাজুক অবস্থা..১৯৩ রানের মাথায় ড্রেসিং রুমে আশ্রয় নেন সেরা ৮ জন ব্যাটসম্যান..সে সময় দলের চরম ভরাডুবি নিয়েই যেন সবাই হতাশায় ডুবে থাকেন..এমনতর অবস্থায় আবুল কেন কেউই যেন ভাবেননি একটা সম্মানজনক অবস্থানে বাংলাদেশ দল পৌছে যাবে..বাকিটা ছিলো ইতিহাস আর বিশ্ব রের্কড গড়ার মহুর্ত..১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে রিয়াদের সাথে জুটি বেধে এক অসাধারন ও দেখবার মত শতরানের ইনিংস উপহার দিয়ে রীতিমত বিশ্ব রের্কড গড়ে তোলেন আবুল..যার প্রশংসার যেন শেষ নেই…একজন দক্ষ ব্যাটসম্যানের মতই এক একটি চোঁখ জুড়ানো শর্ট খেলে আবুল যেমন খুলনা ষ্টেডিয়াম গরম করে তোলেন তেমনি স্মরনীয় করে তোলেন..১০৮ বলে ১৩টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারী ও ৩টি বিশাল ছক্কা হাকিয়ে খুলনা টেষ্টের প্রথম দিন শেষে ১০০ রান তুলে অপরাজিত থাকেন..

আবুলের আগে আরো ৩জন ১০ নম্বরে নেমে টেষ্টে শতরান হাঁকান..এরমাঝে শুধু মাত্র অষ্ট্রেলিয়ার ডাফ ডেবু টেষ্টে শতরান করেন ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্বে..ডাফ ছিলেন একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেই স্বীকৃত..১ম ইনিংসে ডাফ ৭নম্বরে নেমে ৩২ রান করে আউট হন..তবে দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে ডাফ ১০ নম্বর পজিশনে ব্যাট করে ১০৪ রান তুলেন..ডাফের গড়া সেই রের্কডটাকে যেন ম্লান করে দেন আবুল..প্রথম টেষ্ট ইনিংসেই ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আবুলের শতরান তাই বিশ্ব রের্কড হয়ে থাকবে..শত বর্ষের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজীড় শুধুই আবুলের হয়ে থাকল…

আবুল ও রিয়াদ যখন জুটি বাধেন তখন দলের রান মাত্র ৮ উইকেটে ১৯৩..এজুটির রের্কড গড়া মুল্যবান ১৭২ রানের সুবাদে বাংলাদেশ প্রথম দিন শেষ করেছে ৮উইকেটে ৩৬৫ রান তোলার মাঝে..এটাও এক রের্কড..এর আগে একদিনে বাংলাদেশ এমন বড় স্কোর গড়তে পারেনি..দ্বিতীয় দিন আবুল ও রিয়াদের সামনে আরো রের্কড সৃষ্টির সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে..এদুজন যদি বেশ কিছু সময় ব্যাট করে যেতে পারে তাহলে রিয়াদের যেমন শতরান হয়ত আসবে তেমনি আবুল ডেবু টেষ্টে ১০ নম্বরে নামা ব্যাটম্যানদের মাঝে সর্বোচ রান তোলার রের্কডটিও নিজের করে নেবেন..প্রয়োজন মাত্র ৫রান..ওদিকে রিয়াদের শতরানের মুখ দেখতে হলে করতে হবে আরো ২৮টি রান..তাই যদি হয় জুটিতে দশতাধিক রানও উঠে যাবে..এছাড়া আর মাত্র ১৮ রান তুলে নিতে পারলেই আবুল হবেন টেষ্ট ক্রিকেটে ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনিংসে সর্বোচ রান করার অধিকারী…

”আ”…আবারও যেন অপেক্ষার পালা..কে যানে নুতন কোন ”আ” টেষ্ট আসরে কোন বিস্ময় ছড়াবেন…একজন প্রতিভা আছেন..যে কিনা ইতিমধ্যেই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন..কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিশ্ব যুব ক্রিকেট আসরে দু দুটো শতরানই শুধু হাঁকাননি আসরে সর্বাধিক রান করার কৃতিত্বও দেখিয়েছেন..সেই “আ” হলেন তরুন আনামুল..অপেক্ষায় থাকলাম নুতন কিছু দেখার..

রিয়াদ ও আবুল যেভাবে ধীরস্থির ও ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন অনেকটা পথ তা দলের মান রক্ষা করেছে বটে তবে দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের মান বাচাঁতে পারেনি..বরং তাদের লজ্জায় ও হতাশায় ডুবিয়েছেন..ধর্য্য ও দায়িত্ববোধ থাকলে যে ভাল কিছু করা যায় তাই যেন দেখালেন রিয়াদ ও আবুল…যা দেখে কি প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের কিছুই শেখার নেই..নাকি একই ভুল করে যাওয়া হবে অহেতুক তাড়া হুরা আর বারতি শর্ট খেলে সাজ ঘরে ফেরার মাঝে…

সব শেষে একটা বিষয়ে কিছু না বল্লেই নয়…….অনেকেই বলেন “আবুল-গাজী” এর মত অনেক তরুন প্রতিভা রয়েছে…যারা চমক দেখাচ্ছে…তবে হারিয়েই যাচ্ছে কিছুদিন পরেই…কারনটা কেন জানি মনে হচ্ছে অতিমাত্রায় হাওয়ায় ভাসানো…আর অল্পতেই বিশ্ব তারকা খেতাবে ভুষিত করা…এইত আজ এক ইতিহাস রচনা করলো অষ্ট্রেলিয়ান দলনায়ক মাইকেল র্ক্লাক…২০১২ সালে র্ক্লাক হাঁকালেন রের্কড সংখ্যক এক ট্রিপল ও তিনটি ডবল সেঞ্চুরী…ভাবাই যায়না…তাকে নিয়ে অষ্ঠ্রেলিয়ানরা যতটা মাতামাতি করেন তার চেয়ে ঢেড় বেশী অল্প স্বল্প আমাদের তারকাদের নিয়ে মাতামাতি করে হাওয়ায় ভাসাই আমরা…তাই যেন তরুন প্রতিভা গুলো অল্পতেই হারিয়ে যায়…যেমন আজ নিখোজ সংবাদের মতই আশরাফুল…তাই বলছিলাম আবুল-গাজীদের ওদের মত থাকতে দিন…ওদের মত খেলতে দিন…অল্পতেই বেশী করে মাতামাতির প্রয়োজন নেই…নাচানাচির-মাতামাতির একটা সীমা থাকা চাই…চাইনা অল্পদিনেই আশরাফুলের মত নিখোজ হয়ে যাক ওরা…

No comments.

Leave a Reply