জালাল ইউনুসের অসাধারন রের্কড..ইনিংসে ৯ উইকেট দখল

বল হাতে বরাবরই ছিলেন সফল..কখনও ৩টি বা ৪-৫টি উইকেট,কখনও বা ৭ উইকেট পকেটে ভরেছেন..এতেও মন যেন ভরেনি..ম্যাচে ৯ উইকেটের পর ১০ উইকেটও নিয়েছেন..অতঃপর অসাধারন রের্কড গড়া এক কীর্তি গড়ে নিজেকে আলাদা ভাবে তুলে ধরেছেন..অতুলোনীয় হ্যাট্রিক সহ এক ইনিংসে তুলে নেন রের্কড সংখ্যক সর্বোচ ৯ উইকেট..যে ম্যাচে ত্রাস সৃষ্টি করে হ্যট্রিকসহ নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট..

লীগ ও জাতীয় ক্রিকেটের আসরে বল হাতে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে এমনতর তাক লাগানো নৈপূন্য প্রদর্শন করার পরও স্বপ্ন পূরন আর হয়নি তার..নির্বাচকদের অবহেলার কারনে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার সৌভাগ্য জোটেনি..অবশ্য কিছুটা দুর্ভাগ্যও কাজ করেছে..তা না হলে খেলা হয়ে যেত জাতীয় দলে..সফরকারী এমসিসি ও শ্রীলংকার বিরুদ্বে একবার জোনাল খেলায় দলে থাকলেও বসে বসে সময় কাটাতে হয়েছে..১৯৭৭-৭৮ সালে এক একটি সেরা বোলিং নৈপূন্যের সাক্ষর রেখেও নির্বাচকদের মন জয় না করাটা ছিলো সত্যি হতাশার..

বলছিলাম বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম পরিচালক সফল ও নিষ্টাবান সংঘঠক সবার প্রিয় জালাল ইউনুসের কথা..যার বল হাতে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপুনি ধরানো বোলিং নৈপূন্যের কথা আজকের অনেকের কাছেই যেন অজানা..এলেখায় এক সময়ের খ্যাতিমান ন্যাটা ওপেনিং বোলার জালালের কিছু উল্লেখ যোগ্য সাফ্যলের কথাই তুলে ধরছি..

ঢাকা ক্রিকেট লীগ খেলা শুরু করেছিলেন ১৯৭৩ সালে ভিক্টোরিয়ার হয়ে..৭৬’সালে খেলেন ধানমন্ডির হয়ে..১৯৭৬-৭৭ মরসুমে ধানমন্ডির হয়ে মোহামেডানের বিরুদ্বে সবোর্চ ৭ উইকেট দখল করে দারুন চমক দেখিয়েছিলেন(৯.৩-৩-২৬-৭)…যে ম্যাচে মাত্র ৮৫ রানে গুড়িয়ে যায় মোহামেডানের ইনিংস এবং ধানমন্ডি জয়ের স্বাদ নেয় জালালের স্মরনীয় বোলিং নেপূন্যের সুবাদেই..এছাড়া ১৯৭৬-৭৭ মরসুমে শহিদ স্মৃতি ক্রিকেটে আবাহনীর হয়ে খেলে সেমি ফাইনালে মোহামেডানের বিরুদ্বে জালালের ১৩ ওভার বল করে ৩ মেডেন নিয়ে মাত্র ২৭ রানে সবোর্চ ৪ উইকেট দখলটিও ছিলো তুলে ধরার মত..

..ঠিক তার পরের মরসুমে যোগ দেন আবাহনীতে..আর সেই থেকেই বল হাতে জ্বলে উঠা..বলতে হয় ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮ এই দুই মরসুম যেন ছিলো তার সেরা মরসুম..বেশ কিছু অতুলোনীয় কীর্তি গড়েন জালাল এসময়..আবাহনীর হয়ে প্রথম বছরটিতেই শহিদ স্মৃতি ক্রিকেট ট্রফি জয়ের পেছনে মূখ্য ভুমিকা রাখেন জালাল..সেমি ফাইনালে ৪টি ও ফাইনালে সবোর্চ ৫টি উইকেট নিয়ে নিজেকে সফল বোলার হিসেবে তুলে ধরেন….একই মরসুমে লীগের সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে জালালের স্মরনীয় বোলিং নৈপূন্য আজও যেন জ্বল জ্বলে হয়ে আছে অনেকের স্মৃতির পাতায়..থাকবেই না কেন লীগের শেষ দুম্যাচেই যে অসাধারন কৃতিত্ব দেখিয়ে দখল করে নিয়েছিলেন ১৯টি উইকেট..সেমি ফাইনালে ন্যাশনাল স্পোটিংয়ের বিরুদ্বে নেন ম্যাচে ১০ উইকেট..প্রথম ইনিংসে ২৩ রানে ৬ উইকেট দখল করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০.৫ ওভার বল করে মাত্র ১০ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট..এছাড়া ৭৭-৭৮ মরসুমে আবাহনীর হয়ে মোহামেডানের বিরুদ্বে ফাইনালে জালালের তাক লাগানো বোলিং নৈপূন্যে ছিলো তুলে ধরার মত..ধারালো বোলিং দ্বারা লীগ ফাইনালে মোহামেডানের বিরুদ্বে সবোর্চ ৯ উইকেট দখল করে দারুন কৃতিত্ব দেখান..প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভার বল করে ৪মেডেন সহ মাত্র ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মোহামেডানকে ৯৩ রানে গুড়িয়ে দিতে বড় ভুমিকাটি রাখেন..আর দ্বিতীয় ইনিংসে দখল করেন সবোর্চ ৫ উইকেট(১৮-৬-৩৯-৫)..তবে ৯ উইকেট লাভের আনন্দটা শেষ অবধি স্বান্তনা হয়ে রয় দল ফাইনালে হেরে যাওয়ায়..সে মরসুমে আরেক খেলায় অগ্রনী বাংকের বিরুদ্বে ম্যাচে ৫৯ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট(১১-১-৩৫-৫/৯-২-২৪-২)..পুরো মরসুমে এমনসব বোলিং সাফল্যের
পরও সে সময় সফরকারী লংকানদের বিরুদ্বে একটা জোনাল ম্যাচে নিয়ে সাইড লাইনে বসিয়ে রেখে নির্বাচকরা যে জালালের প্রতিভার প্রতি অবিচারই করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা..যা নিয়ে সে সময় অনেক সমালোচনাও হয়..

১৯৭৮-৭৯ মরসুমটিও জালাল ইউনুসের ছিলো বেশ সফল..সে বছর জাতীয় ক্রিকেটের ৫ম আসরের ফাইনালে প্রশংসনীয় নৈপূন্যে প্রদর্শন করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যলয় দলকে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাইয়ে দিতে মূখ্য ভুমিকা রেখেছিলেন..বিমানের বিরুদ্বে ফাইনালে নিজের ঝুলিতে জমা করেছিলেন সবের্চ ৮ উইকেট..প্রথম ইনিংসে ১১ ওভারে ১ মেডেন নিয়ে মাত্র ২৭ রানে দখল করেছিলেন ৫ উইকেট..আর দ্বিতীয় ইনিংসে তার দখলে নেন ৩ উইকেট(২২.৩-৮-২৮-৩)..লীগ জীবনের সেরা ও স্মরনীয় সাফল্যটি আসে সে মরসুমেই..লীগ খেলায় অনন্য রের্কড সৃষ্টি করেছিলেন বাঁহাতি খ্যাতিমান বোলার জালাল অমরজ্যোতির বিরুদ্বে…যা কিনা ইতিহাস হয়ে আছে..এক ইনিংসে রের্কড পরিমান সবোর্চ ৯টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন রীতিমত ত্রাস সৃষ্টির মাঝেই..যার মাঝে ছিলো তাক লাগানো হ্যাট্রিক..১৫.৫ ওভার বল করে ৫ মেডেন সহ মাত্র ২৪ রানে হ্যট্রিকসহ দখল করে নিয়েছিলেন ৯টি উইকেট..যা কিনা রের্কড হয়ে আছে..ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট(১১-৪-২২-৪) নিলে খেলায় ১৩ উইকেট নিয়ে স্মরনীয় বোলিং নৈপূন্য প্রদর্শন করে আবারও জালাল নিজেকে আলাদা ভাবে তুলে ধরেন..

তুখোড় ন্যাটা বোলার জালাল সেই ১৯৭৩ সালে খেলা শুরু করে ১৯৯১ সালে গিয়ে খেলার ইতি টেনেছিলেন আবাহনীর হয়ে..খেলা ছাড়ার পরই সংঘঠক হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন আবাহনীর সাথে..১৯৯৬ সাল হতেই ক্রিকেট বোর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন..বর্তমানে বোর্ডের অন্যতম একজন পরিচালক হিসেবে  সফলতার সাথেই যেন ক্রিকেটের সেবা করে চলেছেন..

জালাল ইউনুসের দুভাগ্যের কথা বলেছিলাম লেখার শুরুতে..বলাটা একারনে যে সমসাময়ীক কালে এক সাথে খ্যাতিমান অনেক সূচনাকারী বোলারকে আমরা পেয়েছিলাম..তাদের মাঝে তুলে ধরতে হয় দীপু-মাসুদ-সামি-বাদশা-দৌলত-সাজু-তানভীর হায়দার ও আযমের কথা..তবে সে বছর মাঠের পারফরমেন্সের বিচারে জালাল যে অনেকের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তা বলতেই হয়..যে কারনে বিদেশী দলের বিরুদ্বে খেলার সুযোগ না পাওয়াটা জালালের কাছে ছিলো যন্ত্রনাদায়ক..আলাপকালে জালাল তেমনটাই বল্লেন….হ্যাঁ এটা ভাবলে আজও পীড়া দেয়..বলতে হয় আমার যোগ্যতা আর মাঠের পারফরমেন্সের বিচারে একটা সুযোগ নির্বচকরা দিতে পারতেন..
একথা বলতেই হয় জালাল-দীপু-মাসুদ-সামি-বাদশা-দৌলত-সাজু-তানভীর হায়দার ও আযমের মত বুদ্বিদীপ্ত,বিচক্ষন,স্কিলফুল সুইং বোলারের অভাবটা আজও যেন রয়ে গেছে..এক মাশরাফিকেই যেন আলাদা ভাবে রাখতে হয়..এদিকটায় জালাল ইউনুস বলেন সত্যি করে বলতে কি পুরানোদের মত স্কিলফুল বোলারের অভাবটা রয়ে গেছে..আজকালত জোড়ে বল করতে পারলেই মনে করা হয় বোলার হয়ে গেছি..

 

 

One Response to “জালাল ইউনুসের অসাধারন রের্কড..ইনিংসে ৯ উইকেট দখল”

  1. Kishore

    Sep 17. 2012

    I remember watching his bowling at Abahani cricket ground many times. He was an excellent fast bowler — very fast! Taking 9 wickets in just one match — just unbelievable!

    Reply to this comment

Leave a Reply to muhammad ali