এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবলার মামুন জোয়ারদারের স্মৃতির বেদনা
এইত সেদিন ১৪ আগষ্ট সকালে অফিসে বসে হঠাৎ দেখি কানাডা প্রবাসী মামুনের ম্যাসেজ..কিরন ভাই কেমন আছেন..আপনার স্পোর্টসের ওয়েব সাইটটি দেখলাম..ভাল লেগেছে..পুরানো দিনের স্মৃতি গুলো যে ভাবে তুলে ধরছেন তাতে নিজেই যেন হারিয়ে গেলাম কিছু সময়ের জন্য অতীতের সেই সুখকর মহুর্তে..প্লিজ আপনার ফোন নাম্বারটা দেন..ম্যাসেজটা দেখে কি যে ভাল লাগলো..মিনিট বাদেই দেখি মামুনের ফোন..এই মামুন আর কেউ নন আশি নব্বুই দশকের দেশ সেরা ফুটবলারের একজন মামুন জোয়ারদার..ভাবতেই অবাক লাগছে ‘৯৪ তে দেশের বাইরে যাবার পর ১৮ বছর বাদে মামুনের সাথে আলাপ..তাও টেলিফোনে..দীর্ঘদিন পর কথা বলতে গিয়ে হারানো দিনের স্মৃতিচারনই করা হলো বেশী..প্রিয় ফুটবল জগতটা ছেড়ে গিয়ে প্রবাস জীবনের দিনকাল কেমন যাচ্ছে প্রথমেই জানতে চাইলাম..জবাব এল ভাল আছি,শান্তিতে আছি কিরন ভাই..তবে একান্ত আপন মনে যখন নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের স্মৃতির পাতা নিয়ে নাড়া চড়া করি তখন আজকের আমাদের ফুটবলের করুন দৈন্য দশা দেখে খারাপই লাগে..কষ্টও পাই..যা বড় যন্ত্রনাদায়ক..নিজেকে ফুটবলার পরিচয় দিতেও খারাপ লাগে..ভেবে পাইনা কেমন করেই বা হারিয়ে গেলো সেই ষ্টেডিয়াম ভরা দর্শক..মুর্হমুর্হ করতলি আর চিৎকার..খেলার টান টান উত্তেজনা..আবাহনী ও মোহামেডানের খেলা নিয়ে আলোচনার ঝড় গুলো..মামুনের কথা খেলার মাঝে রাজনীতির প্রবেশ ঘটলে আর খেলার মান্নোয়নের চেয়ে যদি পকেট উন্নোয়নটাই মূখ্য হয় তাহলে যা হবার তাই যেন হয়েছে..যেকারনে খেলা নেমে গেছে নীচ তলায় আর ব্যাক্তি বিশেষ উঠে গেছে উচু তলায়..ব্যাপারটা দুখ:জনক বৈকি..তাই অদূর ভবিষৎএ ভাল কিছুর আশাও করা যায়না..অবাকই লাগে আজকালতো দেখি আবাহনী-মোহামেডান খেলা হলেও কারো মাঝে বিন্দুমাত্র আলোচনাও নেই..এমন পর্যায়ে ফুটবল যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি..এমন ভাবনা মামুন কেন কোন ফুটবল প্রেমিকের ছিলো বলে মনে হয়না..হতাশাজনক ব্যাপার ছাড়া আর কি..
’’মামুন জোয়ারদার’’এক সময়ের বড় তিন চ্যাম্পিয়ন দল আবাহনী-মোহামেডান-মুক্তিযোদ্বা তথা জাতীয় ফুটবল দলের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় এক খেলোয়াড়ের নাম..এক যুগেরও বেশী সময় ধরে খেলে গেছেন দাপটের সাথেই..তুখোর উইঙ্গার মামুন কখনও রাউট সাইড বা কখনও লেফট সাইডে বল নিয়ে ছুটতেন তড়িৎ গতিতে..অনায়াসেই দুতিনজনকে কাটিয়ে ঢুকে পড়তেন বিপদ সীমানায়..জোড়ালো শর্টে গোল করে বা গোল করিয়ে খুজতেন সুখ..অনেক ম্যাচের জয়ের নায়কও ছিলেন মামুন..
মামুনের ঢাকা মাঠে খেলার সূচনাটা হয়েছিলো ১৯৮৫ সালে আজাদ স্পোটিং দলের হয়ে..এরপর চলন্তিকা,ওয়ারী,ভিক্টোরিয়ায় খেলার পর নিজেকে পরিচিত করে তোলেন এবং নজর কেড়ে নেন বড় দলের..এ সুযোগে মোহামেডানই দলে ভিড়িয়ে নেয় মামুনকে..’৯০-’৯১ তে মোহামেডানে খেলার পর মামুনকে কেড়ে নেয় আরেক বড় দল আবাহনী..‘৯২ হতে ’৯৪ আবাহনীতে খেলার পর যোগ দেন মুক্তিযোদ্বা সংসদে..দুবছর এ দলে খেলার পর’৯৭ সালে ফের আবাহনীর জার্সী গায়ে জড়ান..আর তার লীগ জীবনের ইতি ঘটে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্বার হয়ে..
তূখোর ফুটবলার মামুন জোয়ারদারের বাংলাদেশ দলে খেলার লালীত স্বপ্ন পূরন হয় ১৯৮৯ সালে যুব দলে খেলার মাঝেই..সেই হতে ’৯৭ সাল অবধি টানা ৮ বছর ছিলেন জাতীয় দলের এক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়..খেলে গেছেন নৈপূন্যের সাথেই..জাতীয় দলে খেলে তার আর্ন্তজাতিক গোল ৯টি..জাতীয় দলের জার্সী গায়ে জড়িয়ে মামুন খেলেছেন সৌদি আরব,কাতার,চীন,বাহরাইন,দুবাই,কোরিয়,পাকিস্থান,সিঙ্গাপুর,শ্রীলংকা,ভারত,থাইল্যান্ড,জাপান,বার্মা এই ১৩টি দেশে..
মূলত: মামুন লাইম লাইটে আসেন যেন ১৯৯২ সালে..মোহামেডান ও আবাহনীর মত বড় দলে তার শুরুটা শুভ ছিলোনা বলা যায়..কোচ হেজাজির অপছন্দের তালিকায় থাকার কারনে নিয়মিত খেলা হতনা তার..‘৯২তে আবাহনীতে যোগ দিলেও তখন রাশিয়ান খেলোয়াড় সেরা একাদশের প্রথম পছন্দ..সেবার মোহামেডানের বিরুদ্বে লীগ শিরোপা জয়ের শেষ গুরুত্বপূর্ন খেলায় কোচ সালাউদ্দিন পলিনকভকে বসিয়ে অনেকটা যেন ঝুকি নিয়েই মামুনকে মাঠে নামান..ব্যাস পাল্টে দিলেন মামুন দলের পুরো চেহারা এবং উপহার দিলেন জীবনের সেরা খেলা..যা ছিলো কিনা মামুনের ফুটবল ক্যারিয়ারের উপরে উঠার টার্নিং পয়েন্ট..আবাহনী সেদিন ২-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের দখলে নেয়..অসাধারন দুটো মূল্যবান গোলই করেছিলেন মামুন..ছিলেন তাই ম্যাচ সেরা..এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি মামুন..হয়ে উঠেন আবাহনী আর বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়..মামুন জাতীয় দলের হয়ে স্মরনীয় খেলাটিও খেলেন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দেয়ার মাঝে..বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথম কাপ জয়ের স্বাদ নিয়েছিলো ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্টিত চার জাতি টুর্নামেন্টে..বাংলাদেশ ২-১ গোলে মিয়ানমারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো..জয় সূচক দুটো গোল করেন মামুন ও নকিব..যা ছিলো মামুনের স্মরনীয় খেলা..
অনেকটা যন্ত্রনা-কষ্টের জ্বালা নিয়েই যেন ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্বায় খেলে ফুটবলকে গুড বাই জানান দেন..আবাহনীতে ফুটবল জীবনের সেরা কটি মরসুম কাটানোর কারনে দলটির প্রতি অন্যরকম একটা মায়ার বাধনে নিজেকে যেন জড়িয়ে নিয়েছিলেন..আর তাই মামুনের শেষ ইচ্ছে ছিলো খেলা হতে বিদায় নেবেন আবাহনীর জার্সী গায়ে জড়িয়েই..ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই সময়টায় আবাহনীর কর্তারা তার বিশেষ অনুরোধকে কানে না নিয়ে অপমানের সূরে “না” বলে দূরে ঠেলে দেয়..যা ছিলো কিনা মামুনের খেলোয়াড়ী জীবনের বড় কষ্ট দায়ক ঘটনা..যে কারনে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্বার হয়ে শেষ খেলাটি খেলেছিলেন বুক ভরা যন্ত্রনার মাঝে মনের ইচ্ছের বিরুদ্বেই..যে ব্যাপারটা আজও ভাবলে মামুনকে পীড়া দেয়..আর বেদনায় মনকে ভরিযে তুলে..
Mamun Joarder
Aug 16. 2012
This is a wonderful memory. Thank you very much!
Shaheen
Sep 04. 2012
Great story…Mamun was a great footballer. I know he played great for MSC, but then joined AKC because Hejazi did not want him in starting eleven. But when Kaikobad was MSC coach, Mamun formed a formidable attacking partnership with Nakib, Sabbir.
Topu
May 17. 2020
Hi Kiron, could you please send Mamun s phone or email id. He is my childhood friend. Havnt seen him more than 25 years. I am in Melbourne. Please contact arifulmama@gmail.com.
Thank you very much.