মোহামেডান ও আবাহনীর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আজ আর নেই

0-am1একটা সময় ছিলো চিরশক্রু মোহামেডান ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ফুটবল লড়াই যেন ছিলো এক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা…রীতিমত রনক্ষেত্র পরিনত হত ঢাকা ষ্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকা…মর্যাদার লড়াইয়ে মোহামেডান ও আবাহনীর শান্তিপূর্ন খেলা স্বপ্নেও প্রত্যাশা করা যেতনা..এদুদলের খেলা হবে আর খেলোয়াড় সমর্থকের মাঝে মারামারি-কাটাকাটি-হাঙ্গামা-লুটপাট অতঃপর পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও বেধরক লাঠিপেটায় লোকজন আহত হবেনা এমনটা ছিলো ভাবনার বাইরে..মাঠে দুদলের খেলোয়াড়দের মারমুখি আচরন ও হাতাহাতিটাই একপর্যারে ভাইরাসের মত তড়িৎ ছড়িয়ে পড়ত গোটা গ্যালারীতে এবং সেই সাথে দূর দুরান্তে…এমনকি মফস্বলেও এই দুদলের ভক্তদের মারামারির ঘটনা ঘটত..যে দল হারবে তাদের ভক্তদের যেন মুখ দেখানোই দায় হয়ে উঠত…ওদিকে মাঠে ও মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দেরও ভয়ে ও আতন্কে থাকতে হত..মাঠেত সমর্থকদের গালমন্দ শুনতেই হত আর ইটপাটকেল-জুতা-কলার ছোকলা-বোতল-ছাতা ছুড়ে মারার কারনে নিরাপদে আশ্রয় নেয়া হত…শুধু কি তাই ড্রেসিং রুমেও দুতিন ঘন্টা বন্দি অবস্থায়  থাকতে হত..পরে পুলিশের সহায়তায় ক্লাব টেন্টে ফেরা হত এমনকি হারের পরদিন ক্লাব ঘর থেকেও ভয়ে বের হতেন না ফুটবলাররা…ওদিকে রেফারীর ছোটখাট বা বড় ভুল হলেতো আর রক্ষা নেই…আহ হা রে অসহায় ভাবে কত মারই না খেত হয়েছে তাদের ফুটবলার ও সমর্থকদের কাছ থেকে…লাথি-কিল ঘুষির আঘাতে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে  রীতিমত মাটিতে শুইয়ে ফেলা হয়েছে রেফারীদের…মাঝে মাঝে পুলিশের বেষ্টনিতে থেকে মাঠে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা হয়েছে…

0-am2

…ছবি দুটো হঠাৎ করে চোখে পড়লে মনেই হবে কোন রাজনীতিক দলের বিক্ষোভ সমাবেশ বা বিক্ষোভ মিছিল চলছে..আসলে সে ধারনা ভুল হবে…ছবি দুটো হলো বামে মোহামেপানের বিক্ষোভ সমাবেশ ও ডানে আবাহনীর পয়েন্ট কেটে নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল…যেখানে হাজারো দলীয় ভক্তের উপস্খিতি…

0-am3

…ফুটবলারদের আসল লড়াই বাদ দিয়ে হাতাহাতির যুদ্ধ যেন চলছে…

মোহামেডান ও আবাহনীর সম্মানের আর মর্যাদার খেলা নিয়ে উত্তেজনা-মাতামাতি-উম্মাদনার যেন শেষ ছিলোনা ওসময়টায়..দলবদলের সময় তো ষ্টেডিয়ামে সমাগম ঘটত দুদলের হাজার হাজার ভক্তের…নুতন তারকা ফুটবলারকে নিয়ে রীতিমত মিছিল করে ক্লাবে ফেরা হত…মনে আছে একটা সময় ফুটবলারদের অনেকটা জোড় করেই তুলে নিয়ে নিরাপদ অজানা স্থানে রেখে দেয়া হত দলবদলের কাজটা শেষ না হওয়া অবধি…বিজেআইসির খ্যাতিমান ষ্ট্রাইকার সালামকে ‘৮০তে চাঁদরে মুখ ঢেকে মানিকগঞ্জ আরিচা ঘাট হতে তুলে এনেছিলো মোহামেডান ঢামফা অফিস পর্যন্ত…সই করার সময় বিজেআইসির এক কর্মকর্তাকে মেরে নাক ফাটিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো…এমনকি বিমান বন্দরে হামলা দিয়ে বিদেশ ফেরত জাতীয় দলের পছন্দের খেলোয়াড়কেও তুলে নিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটেছে…আর দলবদলের ঠিক পরপরই চলত সমর্থকদের হিসাব নিকাশ..কাকে নিলে ভাল হত..কাকে নেয়ায় শক্তি বাড়লো..কে কয়টা গোল করলে রের্কড ভাঙ্গবে..কার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হবার..এবার চিরশক্রুকে হারাতে পারলে বা শিরোপা জিতলে কে এগিয়ে যাবে জয় পরাজয়ের হিসাবে এসব নিয়ে ভিষনরকম মেতে থাকা হত সবত্র..দুদলের লড়াইটা যতই ঘনিয়ে আসত ততই যেন উত্তেজনাটা বাড়ত..সকাল না হতেই ষ্টেডিয়াম পাড়া গরম হয়ে উঠত দলীয় সমর্থকদের আনাগোনায়..দুপুর না হতেই পুরো গ্যালারী ভরে উঠত..এমনও দিন গেছে গ্যালারীতে স্থান না পাওয়ার কারনে তারকাটা টপকে মাঠেই হাজারো ভক্ত ঢুকে পড়েছেন জোড় করে..পুলিশের থাকত তখন অসহায় ভূমিকা..শেষ মেষ এলো পাথাড়ী লাঠি পেটা-টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেও হিমশিম খেতে হত পরিস্থিতি সামাল দিতে..

0-am4

…উপরে গ্যালারী ভরা দর্শক আর মারামারির হাত থেকে বাচতে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করা হাজারও দর্শক…নীচে হাঙ্গামায় ভাংচুর হওয়া বাস ও ষ্টেডিয়ামের আসবাপত্র ও গ্যালারীতে টিয়ার গ্যাসের ধোয়ায় দিশেহারা দর্শকরা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে…

…কি ঘঠেনি মোহামেডান ও আবাহনী এদুদলের স্নায়ুর লড়াইয়ে…ভাংচুর, হাঙ্গামা, মারামারির কবলে পড়ে হাত-পা-মাথা ফাটিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটা শুধু নয় এজগত হতে চিরতরে বিদায়ও নিতে হয়েছে কজন নিরীহ সমর্থককে মর্মান্তিক ভাবে..সংঘর্ষে জড়িয়ে খেলোয়াড়দের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ১বছর-৬মাস-৩ মাস মাঠের বাইরে থাকার ঘঠনার বাইরেও আবাহনীর ৪ তারকা ফুটবলারকে জেল খাটার ঘানিও টানতে হয়েছে..ক্রীড়া সাংবাদিকরাও বাদ যাননি মার খাওয়া থেকে..আঘাতে মাঠে মাথা ফাটায়িছেন খ্যাতিমান স্পোর্টস ফটোগ্রাফার ক্রীড়াজগতের খন্দকার তারেক ও ক্রীড়া লেখক সেই সাথে আবাহনীর রাশিয়ান ফুটবলারদের দোভাষি হিসাবে কাজ করা মাহমুদুল হাসান শামীম…সাজার প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ-মিছিল কত কিই না হয়েছে…পাশাপাশি শিরোপা জয়ের আনন্দে হাজার হাজার সমর্থকের বিশাল শোভা যাত্রাও চোখে পড়ত ওসময়টায়…এখানে মজার ব্যাপার ‘৮৭তে একবার দুদল অনেকটা যেন পরিকল্পনা করেই শিরোপা নির্ধারনী প্লে অফ ম্যাচে সমতা রেখে নিজেরাই যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মেতে ছিলো মাঠে…এঘটনায়ও কম লন্কা কান্ড হয়নি…নানা মেয়াদে সাজাও দেয়া হয় মোহামেডানের দলনায়ক রনজিত ও আবাহনীর দলনায়ক আসলাম সহ কজন ফুটবলারকে এবং দুদলের পয়েন্টও কেটে রাখা হয়…এনিয়ে অনেক আন্দোলনও করা হয়…হাঙ্গামা এড়াতে শেষমেষ মোহামেডান ও আবাহনীর শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচটি পুনরায় আর্মী ষ্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিলো একবারে দর্শকশূন্য গ্যালারীতে…এসব ঘঠনা সমূহ বর্তমান প্রজমেন্র অনেকেরই জানা নেই…যা কিনা শুনলে তাদের কাছে গল্পের মতই মনে হবে…হওয়াটাই যেন স্বভাবিক…তাই এখানে মোহামেডান ও আবাহনীর মর্যাদার লড়াইয়ের কিছু দুর্লভ ছবি তুলে ধরে সে সময়ে বড় এদুলের খেলা নিয়ে মাতামাতি-উত্তেজনার চিত্রই স্মরন করিয়ে দিচ্ছি…

4sports-2

…বামে ইটের আঘাতে মাথা ফাটানো ফটোগ্রাফার খন্দকার তারেক…মাঝে রেফারীর উপর আক্রমন…ডানে আগাতে মাটিতে লটিয়ে পড়েছেন এক পুলিশ…

...’৮০ সালে আবাহনী ও মোহামেডান খেলায় প্রান হারানো হারুন ও ইয়াসিন এবং মাথা ফাটানো অবস্থায় ক্রীড়া লেখক শামীম...

…’৮০ সালে আবাহনী ও মোহামেডান খেলায় প্রান হারানো হারুন ও ইয়াসিন এবং মাথা ফাটানো অবস্থায় ক্রীড়া লেখক শামীম…

 …১৯৮২ সালে বড় দুই দল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ও আবাহনীর উত্তেজনার লড়াইয়ের হাঙ্গামার ঘটনাটা যেন আমাদের ফুটবলের এক বড় কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরনীয় হয়ে আছে এবং থাকবে অনন্তকাল…কারনটা হলো সেবছর সেনা সরকারের শাসনকালে মাঠের মারামারির সূত্র ধরে সাজা প্রাপ্ত হয়ে আবাহনীর জাতীয় দলের ৪ জনপ্রিয় তারকা ফুটবলারের দুসপ্তাহের মত জেলখানায় দিন কাটানো…এই চার খেলোয়াড় হলেন বর্তমান সময়ের বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন-বাফুফের সাবেক দুই সদস্য হেলাল ও চুন্নু এবং আনোয়ার…

0-am6

.. ‘৮২ সালে ফুটবল মাঠের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার দুই মুহূর্ত…বামে আবাহনীর খেলোয়াড় কতৃক আক্রমনের শিকার রেফারী মুনির হোসেন…ডানে জেলে যাবার আগে থানা হাযতে সাজা প্রাপ্ত চার ফুটবলার হেলাল-সালাউদ্দিন-চুন্নু ও আনোয়ার…

 

No comments.

Leave a Reply