অবশেষে অনেক অবহেলার পর “জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার” পাচ্ছেন ফুটবলার বাবুল-মহসীন ও আশীষ
…গোলের পর গোল…হ্যাটট্রিক ডবল হ্যাটট্রিকের মাঝে রের্কড পরিমান গোল করে ব্রার্দাাসকে টানা দু বছরেই তৃতীয় বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন করার পেছণে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা…অতঃপর ‘৭৫ সালে প্রথম বিভাগের প্রথম ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারানোর স্বাদ নেয়া হয়েছিলো…এক বছর না যেতেই ‘৭৬ সালে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ দলের হয়ে থাইল্যান্ডের কিংস কাপে খেলতে যাওয়া…ছিলেন ‘৮১ মরসুমের ফুটবল লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা…প্রধম বিভাগে খেলতে না খেলতেই ’৭৮ সালের ঢাকার এশিয়ান যুব ফুটবলে বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন…এরপর ‘৭৯ সালেই ঢাকার এশিয়ান কাপ আসরে ছিলেন মূল বাংলাদেশ দলের দলনায়ক…সেই ’৭৮ সালে জাতীয় দলে খেলা শুরুর পর ’৮২ সালে খুলনায় খেলতে যেয়ে মাঠে বোমার আঘাতের আগ পর্যন্ত জাতীয় দলের অপরিহার্য্য খেলোয়াড় ছিলেন…অনেকটা যেন একই গল্প কাহিনী খুরশিদ বাবুল ও আশীষ ভদ্রের মত দুই খ্যাতিমান বড় মাপের মাঠ মাতানো তারকা ফুটবলারের…
…এরা ৩ জনই ছিলেন ’৭০-’৮০ দশকে তাদের সময়কার দেশ সেরা খেলোয়াড় এবং সেই সাথে জাতীয় দলের অপরিহার্য্য ফুটবলার…ছিলেন জাতীয় দলের দলনায়কও…এরমাঝে মহসীন ‘৭৮ সালের যুব দলের পর ‘৭৯ সালে ঢাকার এশিয়া কাপ আসরে-খুরশিদ বাবুল ’৭৯ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা আসরে ও ‘৮৩ সালের প্রেসিডেন্ট কাপে বাংলাদেশ লাল দলের এবং আশীষ ভদ্র ‘৮৫ সালের বিশ্বকাপ বাছাই আসরে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন…এ তিনজনের মাঝে বাবুল ও আশীষের প্রধম সুযোগ হয়েছিলো জাতীয় যুব দলের জার্সীতে খেলার…বাবুল ‘৭৫ সালে কুয়েতের এশিয়ান যুব আসরে ও আশীষের খেলা হয় ‘৭৮ সালের ঢাকার এশিয়ান যুব ফুটবল আসরে…ওদিকে মূল বাংলাদেশ জাতীয় দলে মহসীন ও বাবুল একই সাথে প্রথম সুযোগ লাভ করেছিলেন ‘৭৭ সালের ব্যান্ককের কিংস কাপ টুর্নামেন্টে..আর আশীষ জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন ‘৭৯ সালের মালয়েশিয়ার মারদেকা আসরে…এদের মাঝে কেবল মহসীনই সেরা সময়ে ভাল অফার থাকা সত্বেও তার প্রিয় দল গোপীবাগের ব্রাদার্সের মায়া ছেড়ে তথাকথিত বড় দল মোহামেডান-আবাহনীতে ছুটে যাননি…তবে বাবুল ও আশীষ ভদ্র দুজনই খেলেছিলেন বড় দল আবাহনী ও মোমেডানের জার্সীতে…
…না বল্লেই নয় মহসীন-আশীষ ও বাবুলদের নৈপূন্য ভাস্বর খেলা যেন আজও ভুলতে পারেননি সে সময়ের ফুটবল দর্শকরা…স্মৃতিতে এখনও জ্বল জ্বলে হয়ে আছে ফুটবল প্রেমিকদের…হয়ত ওদের খেলার স্মৃতি জাগ্রত থাকবে আরো অনেক দিন…বলতে হয় ফুটবল প্রেমিকদের হৃদয়ে স্থায়ী ভাবে গেথে আছে নাম গুলো…’৮১র লীগের টপ স্কোরার মহসীন ছিলেন দক্ষ ও কুশলী এক ষ্ট্রাইকার…সালাউদ্দিনের পর তার গায়েই শোভা লাভ করেছিলো লোভনীয় ‘১০’নম্বর জার্সীটি…খুরশিদ বাবুল ও আশীষ ভদ্র দুজনই ছিলেন মাঝ মাঠের নিপুন কারিগর…তবে দুভার্গ্য এতিনজনের অনেক জুনিয়র খেলোয়াড়রা আগেই যা লাভ করে নিয়েছেন সেটাই তারা পচ্ছেন খেলা শুরু করে ছেড়ে দেবারও কয়েক যুগ অবহেলার পাত্র হয়ে থাকার পর !!!…তাও ভাল অবশেষে অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভাগ্য গুনে সর্বোচ্চ সম্মান “জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার” পদকটা গলায় ঝুলাতে যাচ্ছেন ঐ ৩ খ্যাতিমান ফুটবলার…২০১২ সালের তালিকায় নাম উঠেছে এতিনজনের…ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ নিয়ে অভিযোগ ও বির্তকের যেন শেষ নেই…অনেকটা যেন হাসি তামাশার কারন হয়ে দাড়িয়েছে পুরস্কারটি…কোনও মানদন্ডও নেই পুরস্কার প্রদানের দিকটায়…খেয়াল খুশি মতই ক্রীড়া ক্ষেত্রে অনেক কম অবদান রাখা পছন্দের মানুষজনকে দিয়ে দেয়া হচ্ছে এপুরস্কার…অভিযোগ উঠে অনেকটা রাজনীতিকরন যেন হয়ে গেছে এদিকটা…বিশেষ অবদান রাখার পরও এখানে সিনিয়র-জুনিয়রদের এক কাতারে নিয়ে আসা হচ্ছে…দুঃখজনক হলেও সত্য ঘোষনার পর সময় মতও প্রদান করা হয়না পুরস্কার…তাইত এমনও হয়েছে জীবিত অবস্থায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভের ঘোষনা শুনেছেন আর পাওয়া হয়েছে চীর বিদায়ের পর মরনোত্তর!! ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান “জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার” প্রদানে গ্রহনযোগ্য নির্দিষ্ট একটা মানদন্ড না থাকলেই নয়…যোগ্যদের দূরে ঠেলে দিয়ে কম অল্প স্বল্প যোগ্যদেরত দেয়া হচ্ছেই তাছাড়া এখানে নবীনদের অনেকের আগেই পুরস্কার দেয়াটা সত্যি দুঃখজনক ও মেনে নেয়ার মত ব্যপার কিছুতেই নয়…সময় যেন এসেছে জাতীয় পুরস্কার প্রদানের বিষয়টা নিয়ে সংলিষ্টদের গুরত্ব সহকারে ভাববার…কারন জাতীয় পুরস্কারকে গুরুত্বহীন করে দেয়ার মানা যায়না…
…লেখাটা যখন লিখছি তার কিছু আগেই বিদেশ হতে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এক মাঠ মাতানো তারকা ফুটবলারের কল পেলাম ফেইসবুকে…বেচারা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের চরম অনিয়ম নিয়ে কথা উঠলেই অনেক যন্ত্রনা নিয়েই যেন বল্লেন ভাবছি ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজের গর্বের পরিচয়টাই বদলে ফেলি…কথাটা আমার কাছে ছিলো বড়ই পীড়াদায়ক…একজন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদের কাছে যে কতটা কষ্টের তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা…এখানে মজার ব্যাপার হলো এবার খ্যাতিমান তারকা ফুটবলার আশীষ-বাবুল ও মহসীন ২০১২ সালের ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ নেবেন এমন একজনের পাশে দাড়িয়ে যে কিনা ঐতিনজনের থেকে এক দশকেরও বেশী সময় পর যেয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ লাভ করেছিলেন!!! অর্থাৎ আশীষ-বাবুল-মহসীনরা যখন প্রথম জাতীয় দলে খেলেন তখন তিনি ছিলেন কিশোর বালক…একটা সময় যার প্রিয় আদর্শ ফুটবলারও ছিলেন সেই আশীষ ও বাবুল…
Recent Comments