৪এপ্রিলের মর্মান্তিক কালো দিনটি আজও কাঁদায় নভেল-নান্নু-নিম্মুকে

N-N1A-…সপ্ন সবাই দেখে..কে না ভালবাসে সপ্ন দেখতে..আর সে সপ্ন দেখার স্বাদটা যদি ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয় কাউকে নির্মম ভাবে হত্যা করার মাঝে তাহলেত কষ্টের শেষ থাকেনা গোটা পরিবারটির..সাড়াটা জীবন যেন বুক ভরা সেই যন্ত্রনাই বয়ে বেড়াতে হয়..যে দুঃখ ভোলার নয় কিছুতেই..আর যদি মানুষটির মরদেহটাও খুজে পাওয়া না যায় তাহলেত সেই পরিবারটিকে স্বান্তনা দেবার মত ভাষাও থাকেনা..থাকার কথাও নয়..ব্যাপারটা যে কতটা মর্মান্তিক ও বেদনার সেটা কেবল ভুক্ত ভূগীরাই ভাল করে উপলব্ধি করতে পারেন..তেমনি এক দুঃখি পরিবারে গর্বের দুই ছেলে হলো এক সময়ের দেশ সেরা দুই ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক দলনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও তারই বড় ভাই জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নুরুল আবেদীন নান্নু..যারা কিনা শিশুকালে অবুঝ সময়েই তাদের বাবাকে হারিয়েছিলেন ‘৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক সপ্তাহের মাথায়..৪ এপ্রিল আজকের এদিনটিতে ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী কেড়ে নিয়েছিলো নান্নু-নভেলের বাবা চট্রলার খ্যাতিমান ক্রিকেটার শামসুল আবেদীনের তরতাজা প্রান..তাকে আবেদীন কলোনীর নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েই সেদিন বর্বর পাক হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো..ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবার লাশটিও তারা আর খুজে পায়নি..তাইত ৪ এপ্রিল বেদনার কালো দিন হয়ে আছে নান্নু-নভেলের পরিবারের কাছে..যে দিনটি নীরবে শুধুই কাঁদায় আর যন্ত্রনায় ভাসিয়ে দিয়ে যায়..

N-N2

…বামে নভেল..ডানে ‘৮১-র জাতীয় যুব ক্রিকেটে চট্রগ্রাম জেলা দলের মাঝে নভেলকে দেখা যাচ্ছে…

…নান্নু-নভেলের বাবা তৎকালীন হাবীব ব্যাংকের ডেপুটি কন্ট্রোলার মরহুম শামসুল আবেদীন ছিলেন ষাট দশকের চট্রগ্রামের জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান ক্রিকেটার..চাচা সুলতানুল আবেদীন কাওসারও ছিলেন সত্তর-আশি দশকের সময়কালের ঢাকা-চট্রগ্রামের নামী ব্যাটসম্যান..সে সময় সফরকারী এমসিসি দলের বিরুদ্ধে চট্রগ্রাম জোনাল দলেও অন্তভূক্ত হয়েছিলেন সুলতানুল আবেদীন..নান্নু-নভেলের বাবা মরহুম শামসুল আবেদীনের হাত ধরেই গড়ে উঠেছিলো আবেদীন কলোনী ও টাউন ক্লাব দল..তাদের গোটা পরিবারটাই যেন ছিলো ক্রিকেট পাগল..মরহুম শামসুল আবেদীনের ছিলো ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের এক সংসার.. রক্তেই যাদের ক্রিকেট সেই নান্নু-নভেলের ক্রিকেটের প্রতি দুর্বলতা শিশু বয়সেই..বাবার সাথে ড্রয়িং রুমেই ব্যাট নিয়ে মেতে থাকা হত দুজনের..বাবার হাত ধরেই ছুটে যাওয়া হত ষ্টেডিয়ামে..কতনা স্বপ্ন স্বাদ ছিলো মরহুম শামসুল আবেদীনের..বিশেষ করে বড় দু ছেলে নভেল-নান্নু একদিন অনেক ভাল খেলে নাম কুড়াবে এবং জাতীয় দলে খেলে বুক ভরিয়ে দিবে..যা দেখে গর্বে মন ভরাবেন..সব কিছুই চলছিলো ঠিকঠাক ভাবে..এর মাঝেই শুরু হয়ে যায় ‘৭১ এর স্বাধীনতার যুদ্ধ..নেমে আসে অন্ধকার..কে যানত যুদ্ধ শুরুর সপ্তাহ না গড়াতেই ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী কেড়ে নেবে নান্নু-নভেলের বাবার প্রান..আর বাবা হারানোর যন্ত্রনা সাড়াটা জীবন বয়ে বেড়াবে পরিবারটি..সে সময় নভেল ৬ ও নান্নু ছিলো ৫ বছরের বালক..ছোট ভাই নিম্মু তখন মায়ের কোলে..বয়স ১বছরও হয়নি সেময়..বাবার স্বপ্ন দেখাটা হয়নি ঠিক তবে বাবার স্বপ্ন পূরন করে তার আত্মার শান্তি যেন দিতে পেরেছিলেন নভেল-নান্নু এক সাথেই জাতীয় দলে খেলে নিজেদের সুপ্রতিষ্টিত করার মাঝে..যা কিনা দেখে যেতে পারলে কতনা খুশি ও গর্ববোধ করতেন তাদের প্রিয় বাবা মরহুম শামসুল আবেদীন..তাইত জাতীয় দলে খেলার সূখ খোজার চেয়ে বরং বাবার সেই অতৃপ্ত আত্মার কথাটাই যেন নান্নু-নভেলের মনকে কষ্ট আর যন্ত্রনায় ভরিয়ে দেয়..কাঁদায় বেশী করেই..ছোট ভাই নিম্মুও বেশ ভালই রপ্ত করে নিয়েছিলেন ক্রিকেট..তবে পড়ালেখায় উচ্চতর ডিগ্রী লাভের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে ওখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন..মায়ের কাছে ওদের তিন ভাইয়ের কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই..বাবা হারানোর শোক ভুলিয়ে কত কষ্ট করেই না তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে প্রতিষ্টিত করেছেন..জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে নিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরনের মাঝে মায়ের মুখে হাঁসি ফুটাতে পেরেছেন এযেন বড় তৃপ্তি নান্নু-নভেলের..

N-N3

…ডানে নান্নু…বামে ‘৯০ েএশিয়া কাপ ক্রিকেটের বাংলাদেশ দলে নভেল বসা সবার ডানে এবং নান্নু বসা সবার ডানের পঞ্চম…

..খ্যাতিমান ক্রিকেটার নভেল ও নান্নুর ক্রিকেট লীগ জীবনের সূচনা যখন হয়েছিলো টাউন ক্লাবের হয়ে ১৯৭৮ সালে তখন একই দলের ওপেনার ছিলাম আমি..পরের বছর আমরা খেলেছিলাম একই সাথে আবেদীন কলোনী ক্লাবে..জাতীয় যুব ক্রিকেটে চট্রগ্রাম জেলা ও কুমিল্লা বোর্ড দলেও খেলা হয়েছে দুভাইয়ের সাথে..যেকারনে খুব কাছ থেকে দেখা ও মেশার সুযোগ  হয়েছিলো নান্নু-নভেলের সাথে..সেই সূত্রে ওদের বাসায়ও যাতায়ত ছিলো নিয়মিত..এক সাথে খেলতাম বলে নান্নু-নভেলের মা আমাকে স্নেহের চোঁখেই দেখতেন..খুব মনে পড়ে সে সব দিনের কথা..খেলার পাশে লেখালিখির অভ্যাসটা সেই চট্রগ্রামে থাকাকালীন সময়েই..ওদের দুভাইকে নিয়ে অনেক লেখালিখিও করা হয়েছে আমার..মনে পড়ে আশির দশকের গোড়ার দিকে সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল ম্যাগাজিনের সোপর্টস ইনচার্জ মিল্কি ভাইয়ের অনুরোধে নান্নু-নভেলের উপর বড় করে একটা ষ্টোরী করেছিলাম..সেই লেখা লিখতে গিয়ে ৪ এপ্রিলের ঘটনার কাহিনী যেনে ছিলাম নান্নু-নভেলের মায়ের কাছ থেকে..স্মৃতির এ্যালবাম ঘেটে সেই কথা গুলো নুতন করে এখানে তুলে ধরলাম..মনে আছে বুক ভরা আর্তনাদ আর চোঁখের জ্বল ফেলে যন্ত্রনার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে ছিলেন সে কালো দিনটির কথা..যুদ্ধের সেই ৪ এপ্রিল দিনটিতে কার্ফু চলছিলো..দুপুর ৩টার মত বাজে তখন..আবেদীন কলোনীর নিজ বাসায় তখন আত্বীয় স্বজন নিয়ে ব্যাস্থ ছিলেন তিনি..ওদিকে ড্রইং রুমেই বিছানায় শুয়ে ছিলেন নান্নু-নভেলের বাবা শামসুল আবেদীন..একটা সময় হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো..অসময়ে কে বাজালো কলিং বেল এই ভেবে নিজেই দরজা খুলেছিলেন শামসুল আবেদীন..দরজা খুলতেই অস্ত্র হাতে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে ঘাতক পাক হানাদার বাহিনীর কজন সদস্য..এসময় কোন কথা বলার বা কারো সাথে দেখা করার সুযোগ না দিয়েই বর্বর ঘাতকরা হাত কড়া পড়িয়ে জীপ গাড়ীতে করে তুলে নিয়ে যায় অজানা স্থানে..তারপর নির্মম ভাবেই যেন তাকে খুন করে লাশটাও গুম করে দেয়..এখানে ওখানে নানা স্থানে পাগলের মত খোজা খুজি করেছি সবাই মিলে..তবে কোথায়ও কোন ভাবেই সন্ধান মেলেনি তার..এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছু দিন..এরপর হঠাৎ একটা সময় বাসায় ফোন করে একদিন অজানা পরিচয়হীন একজন বলছিলো নান্নু-নভেলের বাবাকে ফিরে পেতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা দিলেই হবে..অনেক কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ করে ১০ হাজার টাকাও দেয়া হয়েছিলো..পরে বোঝা হলো পুরো ব্যাপারটাই ছিলো সাজানো নাটক আর টাকা মেরে খাওয়ার ফন্দি তাদের..এরপর নানা ভাবে খোজা হয়েছে তবে কোন ভাবেই পাওয়া আর হয়নি ওদের বাবার সন্ধান..কথা গুলো যখন এক এক করে বলছিলেন দেখছিলাম তখন চোঁখের কোনায় জ্বল গড়িয়েই পড়ছিলো টিপ টিপ করে..সে না পাওয়ার বুক ভরা কষ্ট-যন্ত্রনার মাঝেও যেন কিছুটা হলেও তৃপ্ত হয়েছেন দীর্ঘ পথ চলার পর নান্নু-নভেল-নিম্মুকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছেন..আর বড় সূখ বাবর স্বপ্ন পূরনের মাঝে দু ছেলের জাতীয় দলে থেলে নিজেদের প্রতিষ্টিত করাটা দেখে যেত পারায়..

No comments.

Leave a Reply