..রক্তে যার শতরানের শ্রোতধারা সেই তামিমতো সেঞ্চুরী হাাঁকাবেনই..

…রক্তে যার শতরানের শ্রোতধারা তার ব্যাটতো জ্বলে উঠবেই…মনমাতানো এক একটি সেঞ্চুরীতো হাঁকাবেই…বলছিলাম বাংলাদেশ দলের তারকা ওপেনার নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের কথা…বাবা ইকবাল খাঁনের ব্যাট থেকেই এসেছিলো স্বাধীনতাত্তোর চট্রগ্রামের প্রথম শতক…আর তামিম করলেন চট্রলার কৃতি সন্তান হিসেবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম শতক…

…সত্তর আশি দশকের চট্রগ্রামের খেলাধূলার অঙ্গনের জনপ্রিয় ও আলোচিত ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব ছিলেন তামিমের বাবা মরহুম ইকবাল খাঁন…যিনি ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন দলনায়ক আকরাম খাঁন ও জাতীয় যুব দলের ক্রিকেটার আফজাল খাঁনের বড় ভাই…ইকবাল খাঁনের ফুটবল ও ক্রিকেট দুখেলাতেই ছিলো সমান দাপট…একই সাথে ঢাকা ও চট্রগ্রাম ফুটবল-ক্রিকেট লীগ খেলে গেছেন নৈপূন্যের সাথেই…আর কুড়িয়েছিলেন অনেক সুনাম…চট্রগ্রামের এক সময়ের অতি পরিচিত ও প্রিয় ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব মরহুম ইকবাল খাঁনের নাম হয়ত আজকের অনেকের কাছেই যেন অজানা..সত্তর-আশি দশকের চট্রগ্রামের অন্যতম সেরা ফুটবলার ও ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে করেছিলেন সুপ্রতিষ্টিত..ফুটবলে ঢাকা ষ্টেডিয়ামও মাতিয়েছিলেন..ঢাকার লীগ আসরের সর্বোচ গোল দাতার শীর্ষ তালিকায় ও খ্যাতিমান ষ্ট্রাইকার ইকবাল খাঁনের নামটি শোভা পেত..

…ইকবাল খাঁনের ঢাকা ফুটবল লীগ ও চট্রগ্রাম ক্রিকেটের দুমহুর্ত…

…১৯৭৫ মরসুমে ঢাকা লীগে ইষ্টএন্ডের হয়ে খেলে ইকবাল খাঁন নজড় কাড়া ১৬ গোল করে দারুন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন…প্রথম পর্বের লীগেই ১৩ গোল দিয়ে ইকবাল ছিলেন গোলদাতার শীর্ষে…তবে ইনজুড়িতে পড়ে খেলেননি বেশ কটা ম্যাচ…আর তাই দ্বিতীয় পর্বের লীগে মাত্র ৩ গোল করে পিছিয়ে পড়েন…সেবছর জাতীয় ফুটবল দলের ট্রায়ালেও ছিলেন ইকবাল খাঁন…পরবর্তীতে ঢাকা ওয়াপদায় খেলেও কৃতিত্ব দেখান…তার দল চট্রগ্রাম জেলা ১৯৭৭ সালে জাতীয় ফুটবলে রার্নাসআপও হয়েছিলো…এছাড়া চট্রগ্রাম ফুটবল লীগেমোহামেডান ও নিজ গড়া কেকেআরসিতে খেলেছেন সুনামের সাথে…করেছেন অনেক গোল…ফুটবল খেলা ছেড়ে প্রশিক্ষক হিসেবেও বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন…তার প্রশিক্ষনে লীগে আবাহনী চ্যাম্পিয়নও হয়…নিজ হাতে গড়া কেকেআরসি দলকে ট্রেনিং করিয়ে অনেক ফুটবলারও গড়ে তুলেছিলেন…এর মাঝে জাতীয় ফুটবল দল এবং ঢাকা আবাহনী-মোহামেডানের এক সময়ের দেশ সেরা মাঝ মাঠের ফুটবলার আশীষ ভদ্র ছিলো ইকবাল খাঁনেরই হাতে গড়া খেলোয়াড়…

…তামিম ইকবালের ৬ টেষ্ট শতকের দুর্লভ মহুর্ত…

…এছাড়া ক্রিকেটে ইকবাল খাঁন ছিলেন একজন দক্ষ অলরাউন্ডার…নির্ভরযোগ্য হার্ড হিটার ছিলেন ইকবাল খাঁন…করতেন স্পিন বোলিংও…চট্রগ্রাম লীগে দাপট দেখিয়েই খেলেছেন আগ্রাবাদ নওজোয়ান,ষ্টার ক্লাব ও মোহামেডানে…নিয়েছেন বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়নের স্বাধ…জাতীয় ক্রিকেটেও খেলেছেন চট্রগ্রাম জেলা দলের হয়ে…ঢাকা লীগে খেলেছেন রেলওয়ের হয়ে…১৯৭৪  সালে চট্রগ্রাম ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম লীগ চ্যাম্পিয়ন ষ্টার ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন ইকবাল খাঁন…১৯৭৯ মরসুমে চট্রগ্রাম লীগের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কারও লাভ করেছিলেন ইকবাল খাঁন…তবে যে রের্কড ইকবাল খাঁনকে স্মরনীয় করে রেখেছে তা হলো স্বাধীনতাত্তোর চট্রগ্রাম লীগের প্রথম শতরানটি এসেছিলো তারই ব্যাট থেকে…অতঃপর ইকবাল খাঁনেরই সুযোগ্য সন্তান তামিম নিজ শহরে ৯ম টেষ্ট খেলতে নেমেই প্রথম বারের মত সেঞ্চুরীর মুখ দেখলেন…এটাও বাবার মতই প্রথম শতকের রের্কড হয়ে থাকবে ভিন্ন এক কারনেই…এখানে তুলে ধরার মত দিক হলো জাতীয় দলে এযাবৎকার খেলা চট্রগ্রামের কোন ক্রিকেটারের এটাই যে প্রথম শতরান হোম গ্রাউন্ডে…ইকবাল খাঁনের আরেক সুযোগ্য সন্তান বড় ছেলে নাফিস ইকবালও ২০০৫ সালে বাংলাদেশের হয়ে টেষ্টে সেঞ্চুরী করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে…নাফিস সে টেষ্টে করেছিলেন ১২১ রান…এটাও যেন রের্কড…কারন ওটাই ছিলো চট্রগ্রামের কোন ক্রিকেটারের প্রথম টেষ্ট শতক…

…চট্রগ্রাম টেষ্টে তামিমের স্মরনীয় শতকের মহুর্ত…বাঁয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের ক্রিকেট ভক্তের অভিনন্দন…

চট্রগ্রামে ঘরের মাঠে আজতো জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২য় টেষ্টের প্রথম দিনেই রের্কড গড়া রান বন্যায় ভাসালেন গ্রেট তামিম ইকবাল(১০৯)…সাথে আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস(১৩০)…দুজনেই চমকপ্রদ শতরান হাঁকিয়ে গড়েছেন এযাবৎকার টেষ্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটির সর্বোচ ২১৪ রান…তামিম-ইমরুলের শতকে আর মোমিনুলের অপরাজিত ৪৬ রানে ভর করে দু উইকেট হারিয়ে প্রথম দিনেই বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে ৩০৩ রান বড় স্কোর…এর আগে তামিম ও ইমরুল জুটিই ইংল্যান্ডের লর্ডসে ১৮৫ রান তুলেছিলেন…খুলনার পর আজ চট্রগ্রাম টেষ্টেও সেঞ্চুরী হাঁকালেন তামিম…মজার ব্যাপার দুবারই করলেন ১০৯ রান…এটা ছিলো দ্বিতীয় বারের মত টেষ্টে টানা দুই শতক…এর আগে ইংল্যান্ডের লর্ডস(১০৩) ও মেনচেষ্টার(১০৮) টেষ্টে টানা দুই সেঞ্চুরী হাঁকিয়েছিলেন গ্রেট তামিম ইকবাল…আর ঘরোয়া জাতীয় ক্রিকেটের আসরে ২০১২ মনসুমে চট্রগ্রামের হয়ে টানা ৩ ইনিংসেই ৩ সেঞ্চুরীর রের্কড গড়েছিলেন তামিম…তিন ম্যাচে ছিলো তার ১৯২+১১৩+১৮৩ রান…ওদিকে টেষ্টে তামিমের করা হয়ে গেছে ৬ শতক…২০০৯ সালে ওয়েষ্ট ইন্ডিজে প্রথম শতরানের মুখ দেখেছিলেন তামিম…করেন ১২৮ রান…এরপর ২০১০-এ ঢাকায় ভারতের বিরুদ্ধে সর্বোচ ১৫১ রান হাঁকান…একই মরসুমে ইংল্যান্ডের সাথে টানা দুটেষ্টে ২ সেঞ্চুরীর পর দীর্ঘ বিরতির পর এবার জিম্বাবের সাথে টানা দুটেষ্টে ২ শতক…

…চট্রগ্রাম টেষ্টে তামিমের স্মরনীয় শতকের আগ মহুর্ত…বাঁয়ে রের্কড গড়া ২১৪ রানের জুটি গড়া শতকের পর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলেন তামিম-ইমরুল…

…মাঝে বেশ কিছুটা সময় দারুন দুর্দিনে সময় পার করেছেন তামিম…কথা বলছিলোনা তার ব্যাট…অনেক সমালোচনারও মুখে পড়তে হয়…এটাই স্বাভাবিক…ব্যার্থ হলে কিছুটা কথাতো উঠবেই…যা ভাল করার জিদ-তাগিদ যে বাড়িয়ে দেয় তা না বল্লেই নয়…তবে ফিরলেন সময়মত আসল যায়গাতেই…বলতে হয় রাজকীয় ঢংএ ফেরা হলো তার…তামিমের এমন ফর্মে ফেরা যেমন নিজের জন্য তেমনি দলের জন্যও মঙ্গলজনক…তামিমের রান মেশিন এমন করেই সচল থাকুক এপ্রত্যাশাই এখন সবার…টানা দুটেষ্টেই যে ধর্য্য ও নির্ভরতার সাথে দায়িত্বশীল ব্যাট করে শতকের মুখ দেখেছেন তা যেন অন্য এক তামিমের পরিচয় মিলে…চট্রগ্রাম টেষ্টে রের্কড গড়া জুটির মাঝে শতক হাঁকিয়েও দেখা গেলো না তেমন উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ…

…বাবার খেলার স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে তামিম…

কেন যানি মনে হলো ঘরের মাঠে এমন উজ্জল কীর্তির মাঝেও লুকানো একটা চাপা কান্না-যন্ত্রনায় আছন্ন যেন ছিলো তামিমের মন…বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কত কিছুই না করেছেন…কত সাফল্যের নায়ক হওয়া…শতরান হাঁকানো…সেরা খেলোয়াড় হওয়া…তবে কিছুইতো বাবাকে দেখাতে বা বাবার হাতে তুলে দিতে পারেননি…শুধুই উৎসর্গ করা ছাড়া…নেয়ার সুযোগ হয়নি সাফল্য লাভের পর বাবার সেন্হ মাখা আদর…নেবেনই বা কেমন করে ছেলের উত্থানের অনেক আগেই যে বাবা ইকবাল খাঁন চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে না ফেরার জগতে…ব্যাপারটা তামিমের জন্য কতটা যে পীড়া দায়ক আর যন্ত্রনার তা আর খুলে বলার অপেক্ষা রাখেনা…বাবা রের্কড করেছিলেন স্বাধীনতাত্তোর চট্রগ্রাম লীগের প্রথম শতক হাঁকিয়ে…আর তামিম ঘরের মাঠেই চট্রলার কৃতি সন্তান হিসাবে টেষ্টে প্রথম শতরানের মুখ দেখে আরেক নজীড় গড়লেন…যা চট্রগ্রামের ক্রিকেট ইতিহাসে বড় করেই লেখা থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই…যা ছিলো চট্রগ্রামবাসীর গর্ব গ্রেট তামিমের ৬ষ্ট তম টেষ্ট সেঞ্চুরী…তাই লেখার শুরুটাই করেছিলাম রক্তে যার শতরানের শ্রোতধারা সেই তামিমের ব্যাটতো জ্বলে উঠবেই…শতরানতো হাঁকাবেই…তামিমের ব্যাট জ্বলতেই থাকুক…আরো শতক হাঁকিয়ে তার বাবাকে উৎসর্গ করুক …সেই সাথে ক্রিকেট প্রেমিকদের মুখে হাঁসি ফোটাক এপ্রত্যাশাই করছি…

No comments.

Leave a Reply