…ফেসবুকে খুজে পাওয়া সত্তর দশকের আবাহনীর খ্যাতিমান ঢ্যাশিং ও স্টাইলিশ ষ্ট্রাইকার সোহরাব…

…ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাঝে যে কতটা জনপ্রিয় তা আজ না বল্লেই হয়..নানা ছবি আর পোষ্ট-কমেন্টেসে এফবি নিয়ে মাতামাতির যেন শেষ নেই..রীতিমত যেন পাগল করে তুলেছে সকল জেনারেশনের মানুষজনকে..নিয়েছে কাছে টেনে আপন করে..অনেকেই আছেন দিনভর ডুবে থাকেন ফেসবুকের মাঝে..বাসা-অফিস,রাস্তায়-পার্কে,মার্কেট-কফি হাউজ সর্বত্রই থেমে নেই ম্যাসেজ আদান-প্রদান..কোথায় কখন কি করা হচ্ছে তাও জানিয়ে দেয়া হয় ছবি সহকারে..ফেসবুক বড় হেলপটা করছে স্মৃতির পাতা হতে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখ গুলোকে খুজে পেতে..এক-দুই এমনকি তিন যুগেরও বেশী সময়ের পুরানো বন্ধু ও আপনজনদের খোজ মিলেছে আমার এই ফেসবুকের মাঝেই..ব্যাপারটা যে কতটা উচ্ছাস আর আনন্দের বলে বোঝানো যাবেনা..

এইত সেদিন রাত্রে হঠাত ইন বক্সে একটা ম্যাসেজ পেলাম ”কিরন ভাই কেমন আছেন..আমি সোহরাব”..প্রথমেই চিনতে একটু খটকা লাগে..তবে খানিক পরেই স্মৃতির পাতায় জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠে ঝলমলে অনেক কিছুই..আর কেউ নন ইনি হলেন ফুটবলে এক সময়ের ঢাকা ষ্টেডিয়াম মাতানো আবাহনী-আজাদ স্পোটিং ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের লম্বা ঝাকরা চুলের ঢ্যাশিং ও ষ্টাইলিশ তুখোর ষ্ট্রাইকার সোহরাব..অবাক না করে পারেনি সত্তর দশকের খ্যাতিমান ফুটবলার সোহরাব ভাই কেমন করে আমাকে খুজে পেলেন এই ভেবে..থ্যান্কস এফবিকে..

ফেসবুকের কল্যানেই বহু বছর পর খুজে পাওয়া হয়েছে এক সময়ের জাতীয় দলের ও ঢাকা লীগের অনেক খ্যাতিমান ফুটবলার ও ক্রিকেটারকে..সাথে বেশ কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক লেখকদের..যারা ছিলেন একটা সময়ের খুব কাছের প্রিয়জন..বিশেষ করে দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকা কটি নাম না বলে পারছিনা..এরা হলেন ফুটবলার রনজিত-মহসীন-রুমি-মিজান-মামুন জোয়ারদার-আলম-হাকিম-কার্জন-আরিফ এবং ক্রিকেটার ইউসুফ বাবু-রবিন-ফয়সাল-বুলবুল-নেহাল-নাজিম সিরাজি-শাব্বীর-প্রিন্স-ইয়াফি-আতিয়ার-ডালিম-শামীম-সাজিদ-রোকন-মাহবুবুর রহমান সেলিম-হালিম শাহ-জাহিদ এবং ক্রীড়া সাংবাদিক-লেখক কাজী আলম বাবু-ফরহাদ টিটো-মন্জুর মিল্কি-মোস্তাফিজুর রহমান-জাকারিয়া-মাহফুজ-নাসিম-মনির-সালাউদ্দিন-জিয়াউল করিম লোটাস-নকিব আহমেদ নাদভী ভাই এবং সালেক সুফি ভাই..

সোহরাব ১৯৭০ সালে ধনিমন্ডির হয়ে ২য় বিভাগ ফুটবল লীগ দিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন খেলার..একই বছর ফরিদপুর জেলা যুব দলের হয়ে জাতীয় ফুটবলও খেলেছেন..এরপর ফুটবলার সোহরাব ১৯৭৩ মরসুমে আজাদের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে প্রথম খেলতে নেমেই রীতিমত চমক দেখান..সে সময়ের সেরা বড় দুদল মোহামেডানের বিরুদ্ধে ১টি ও আবাহনীর বিরুদ্ধে ২টি গোল সহ আজাদের পক্ষে সবোর্চ গোলদাতা হয়ে নজড় কাড়েন সবার..পরের বছরও আজাদের হয়ে নৈপূন্যের সাথে খেলে বেশ কটি গোল করে নিজেকে ভাল ভাবেই তুলে ধরেন..যে কারনে ১৯৭৫ মরসুমে আবাহনী দলে ভিড়িয়ে নেয় কৃতি ষ্ট্রাইকার সোহরাবকে..

..সালাউদ্দিন-চুন্নু-আনোয়ারের পাশে আবাহনীর জার্সী গায়ে জড়িয়ে খেলতে নেমেও থেমে থাকেনি সোহরাবের গোল করার নেশা..এক এক করে অনেক গোলও করেছেন..হ্যাট্রিকও করেছেন এবং সেই সাথে নিজেকে আলাদাভাবেই তুলে ধরেছেন..গোল করার মাঝে যেমন আবাহনীকে জিততে সাহায্য করেছেন তেমনি নিয়েছেন লীগ চ্যাম্পিয়নেরও স্বাধ..সোহরাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ও সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যলয়ের হয়ে জাতীয় ফুটবল খেলেও সুনাম কুড়িয়েছেন..হ্যাট্রিকও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্সী গায়ে জড়িয়ে..সোহরাব ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের দলনায়কও ছিলেন..১৯৭৫ মরসুমে সোহরাব আবাহনীর হয়ে বিপিডবলিউডির বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করে চমক দেখিয়েছিলেন..খেলায় আবাহনী জয় পেয়েছিলো ৫-১ গোলে..আর একাই ৪টি গোল করে তাক লাগান খ্যাতিমান ষ্ট্রাইকার সোহরাব..সেবছর সোহরাবের লীগে গোল ছিলো ১২টি..একই মরসুমে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে চমকপ্রদ হ্যাট্রিকও করেছিলেন সোহরাব..১৯৭৭ সালে সোহরাবের অধিনায়কত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল আন্ত:বিশ্ব বিদ্যালয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছিলো..সেবার হ্যাট্রিক সহ টপ স্কোরার হয়ে সোহরাব দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে বড় ভুমিকা রেখেছিলেন..ঢাকার বাইরে কৃতি ষ্ট্রাইকার সোহরাব চট্রগ্রাম ফুটবল লীগে আগ্রাবাদ নওজোয়ানের হয়ে খেলেও মন কেড়েছেন সবার…১৯৭৩ মরসুমে টানা দুম্যাচে দুই  হ্যাট্রিক করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন সোহরাব..এছাড়া সোহরাব সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ১৯৭৩ সালের জাতীয় ফুটবল আসরে রাজশাহীর জেলার বিরুদ্ধেও হ্যাট্রিক করেছিলেন..

১৯৭৬ সালে এক গুরুত্বপুর্ন খেলায় চীড় প্রতিদন্দ্ধি মোহামেডানকে না হারাতে পারলে সুপার লীগ খেলার পথ বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে দাড়ায় আবাহনীর..আর সেই খেলায় কষ্টার্জিত জয়ের নায়ক হয়ে ধরা দিয়েছিলেন সোহরাব..টুটুলের নিপুন ক্রস থেকে গোল রক্ষক শান্টুকে ফাঁকি দিয়ে দর্শনীয় হেডে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করে আবাহনীকে সুপার লীগে নিয়ে যান ষ্ট্রাইকার সোহরাব..যে খেলার স্মৃতি আজও অনেকেরই মনে জ্বল জ্বলে হয়ে আছে..সোহরাবেরও স্মরনীয় খেলা হয়ে মনে দাগ কেটে আছে সেই ম্যাচটি..জানালেন সোহরাব.. সোহরাবের দুই প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন মোহামেডানের আক্রমনভাগের দুই কৃতি খেলোয়াড় মেজন হাফিজউদ্দিন ও গোলাম সারোয়াড় টিপু..

আক্রমন ভাগের ক্ষিপ্র গতির রাফ এন্ড টাফ খেলোয়াড় ছিলেন সোহরাব..তার ড্রিবলিং-শুটিং ও হেড ওর্য়াক ছিলো বেশ ভাল..আর তাই প্রায় খেলায় কুশলী খেলোয়াড় সোহরাব গোলও করে গেছেন নিপনতার সাথেই..আর নাম ডাকও কুড়িয়েছিলেন বেশ..১৯৭৫ সালে জাতীয় দলের ট্রায়ালেও ছিলেন সোহরাব..তবে দুর্ভাগ্য তার জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ হয়নি নানা কারনে..এনিয়ে তার ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই ঠিক তবে যা ভাবলে খানিকটা পীড়া দেয় এই যা..কথা প্রসঙ্গে সোহরাব জানালেন ১৯৭৫ সালে কুমিল্লার কোর্ট বাড়ীতে অনুষ্টিত জাতীয় দলের ক্যাম্পের এক সময় কোচ সাহেব আলীর কাছে নাকি জানতে চেয়েছিলেন মাত্র কেন ট্রায়ালে অন্যতম দেশ সেরা আক্রমন ভাগের খেলোয়াড় মেজর হাফিজউদ্দিন নেই..কোচ নাকি এতে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন যে বলেছিলেন দেখ নেব তোমায়..ঠিকই দেখে নেয়া হয়েছিলো..ব্যাপারটা যে ছিলো সত্যি দুঃখজনক এবং সোহরাবের কাছে বড় পীড়াদায়ক তা না বল্লেই নয়..এখানে উল্লেখ্য যে ফুটবলার সোহরাব দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাস জীবন যাপন করছেন সূদুর কানাডায়..

 ..এখানে বিশেষ ভাবেই তুলে ধরতে হয় খ্যাতিমান ফুটবলার সোহরাব আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধের সময়টায় রনাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন..বন্দুক হাতে শক্রু বাহিনীর বিরুদ্বে ময়দানে লড়াইও করেছেন সেক্টরটুতে..শিল্পী শাহাবুদ্দিন ছিলেন তার বাহিনীর কমান্ডার আর নাট্য ব্যাক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ছিলেন কো-কমান্ডার..

 

One Response to “…ফেসবুকে খুজে পাওয়া সত্তর দশকের আবাহনীর খ্যাতিমান ঢ্যাশিং ও স্টাইলিশ ষ্ট্রাইকার সোহরাব…”

  1. মাহবুব

    Oct 23. 2014

    ১৯৮৫ সালের আবাহনী – মোহামেডান লীগ ম্যাচের ফলাফল জানতে চাই । কেউ তথ্য দিবেন কি ?

    Reply to this comment

Leave a Reply to Anonymous