…স্মৃতিময় ফুটবল…
…ফুটবলের স্বর্নালী দিন গুলোর কথা মনে হলে আজও মনটা কেমন জানি করে..খারাপই লাগে..কতনা জনপ্রিয় ছিলো ফুটবল..ছিলো উত্তেজনা..সবত্রই তখন আলোচনার মুল বিষয় হয়ে থাকত ফুটবল আর ফুটবল..খেলোয়াড়দের ভিউ র্কাড আর প্রিয় দলের পোষ্টার ছাঁপিয়ে বিক্রির ধুম পড়ত..পত্রিকা আর ম্যাগাজিন জুড়ে থাকত ফুটবলের বড় খবর..ঢাকা ষ্টেডিয়াম ছিলো তখন প্রানের ভাললাগার একটা স্থান..একটা দিন ওখানে না গেলে যেন ঘুম হারাম হয়ে যেত..
বড় দলের খেলা হলেত ষ্টেডিয়ামের গ্যালারীতে তিল ধরনের যায়গাও খালি থাকতনা..বিশেষ করে মোহামেডান-আবাহনীর খেলা দেখাটাও ছিলো সৌভাগ্যের ব্যাপার..ষ্টেডিয়ামের বাইরেও থাকত হাজারও দর্শক..এমনকি শক্ত তার কাটা ছিড়ে বা কখনও তারকাটা টপকে মাঠের ভেতরেও আসন নিত শত শত দর্শক..ষ্টেডিয়ামের আশ পাশের বড় বড় বিল্ডিং গুলোর মাঝেও দর্শক ভরা থাকত..প্রিয় দলের পরাজয় সইতে না পেরে মারা-মারি কাটা কাটি আর ঢিলা ঢিলি ছিলো যেন রুটিন কাজ..প্রান হারানোর করুন পরিনতিও হয়েছে বেশ কজনের এ ফুটবল খেলা নিয়ে..শুধু কি তাই জেলেও যেতে হয়েছে খেলোয়াড়দের বড় দলের খেলায় গন্ড গোলের কারনে..একবারতো ফুটবল মাঠের দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়াতে আর্মী ষ্টেডিয়ামে দর্শক শুন্য ফাঁকা মাঠেও আযোজন করা হয়েছিলো মোহামেডান-আবাহনীর গুরুত্বপুর্ন ম্যাচ..তাইত লীগ ফুটবল নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষই ছিলোনা সেই শুরু হতে শেষ পর্যন্ত..
আবাহনী আর মোহামেডান হয়ে উঠে একে অপরের চীর শক্রু..একটা আসর শেষ না হতেই শুরু হয়ে যেত মাতামাতি..কে কয়টা গোল করলো..কে কয়বার জিতলো এসব ছিলো সবার মুখস্থ বিষয়..লীগ শেষের আগেই শক্রু পক্ষকে ঘায়েল করতে হলে কাকে নিলে ভাল হয় এনিয়ে শুরু হয়ে যেত প্লান করা..এমনকি দলবদলের আগে খেলোয়াড়কে তুলে নিয়ে নিরাপদ যায়গায়ও রেখে দেয়ার ঘটনাও ঘটত..প্রিয় দলের হার বা পয়েন্ট ভাগাভাগিটাও সহ্য করার ছিলোনা ভক্তদের..তাইত রেফারীর একটু খানি ভুল বাঁশি বাজলেই উত্তেজনা চরমে উঠত..শুরু হয়ে যেত রেফারীকে নিয়ে টানা হেঁচড়া আর ঢিলাঢিলি..মারামরি চরমে উঠে গেলে গোটা ষ্টেডিয়ামই নয় এলাকা জুড়ে চলত তান্ডব..পুলিশের লাঠি চার্জ টিয়ার গ্যাস এড়িয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরাটাই ছিলো তখন যেন ভাগ্যের ব্যাপার..ষ্টেডিয়ামের আশ পাশের দোকানপাট গুলোতে তখন বেচা কেনা বাদ দিয়ে তালা ঝুলানো শুরু হয়ে যেত..সে কি অবস্থা..কি যে ছিলো ফুটবল ক্রেজ..
..মোহামেডান-আবাহনী এ দুই বড় দলের খেলা দেখতে হলেত সকাল হতেই লাইনে দাড়ানো যেন শুরু হয়ে যেত..ছক করা হয়ে থাকত মারামারি বাধলে কোন পথে নিরাপদে বাড়ি ফেরা হবে..প্রিয় দলের হারে বা কখনও রেফারীর ভুল বাঁশিতে কত যে ইট পাটকেল-জুতা স্যান্ডেল-কলার ছোকলা-ছাতি-বোতল ছুড়ে মারা হত..খেলা ষ্টপ করে তা সরাতেই পার হয়ে যেত অনেকটা সময়..বিশেষ করে আবাহনী ও মোহামেডান এই দুই বড় দলের খেলোয়াড়েরাত থাকত একটা ভয় ও আতন্কে..কারনটা আর কিছুই নয় গাল মন্দ আর ঢিলত খেতেই ড্রেসিং রুমেও বন্দি অবস্থায় থাকতে হত দীর্ঘ সময়..পড়ে পুলিশের বেষ্টুনিতে ক্লাবে ফেরা হত..তাই শুধু নয় ক্লাব টেন্ট হতেও বাইরে যাওটা অনেক সময় নিরাপদ হতনা সমর্থক পিছু লাগবে বলে..এই ছিলো প্রিয় ফুটবল খেলার হালচাল..
আর আজ কোথায় সে ফুটবল..কবে যে খেলা শুরু হয়..কখন যে বড় দুদল খেলে যায় খবরই রাখা হয়না..কজনই বা রাখেন কে যানে..মাঠেও নেই দর্শক সমাগম..যেন হাতে গনা যায় দর্শক সংখ্যাটা..পত্রিকার পাতায়ও থাকেনা ঢাকার ফুটবলের বড় খবর..অথচ একটা সময় মাঠের গ্যালারীতে থাকত ঠাসা দর্শক..মাঠের ভেতর ও বাইরেও থাকত হাজারও দর্শক..এমনকি বড় দলের অনুশীলন দেখতেও হাজার দর্শকের উপস্থিতি ছিলো প্রতিদিন..প্রশ্ন একটাই কোথায় হারালো ফুটবলের জনপ্রিয়তা..কেমন করে হলো এমন অবনতি..কেনই বা হলো..দু এক লাইনে বল্লে বলতে হয় আশি দশকের পর পরই ফুটবল ফেডারেশনে রাজনীতি করন..মাঠ দখল আর কর্তাদের ব্যাক্তি স্বার্থটাই যখন মূখ্য হয়ে দেখা দিলো তখনই ফুটবলের মরন হলো..যা থেকে আজও বের হয়ে আলোর পথ দেখেনি সেই ফুটবল..দুঃখজনক ব্যাপার বৈকি..
…আজ এখানে ২৮ বছর আগের ১৯৮৬ সালের কিছু সুখকর ও করুন স্মৃতি তুলে ধরলাম..সে বছর ফেডারেশন কাপ দিয়েই সূচনা হয়েছিলো ঢাকার ফুটবলের..সূচনাটাই ছিলো অনেকটা কলন্কময়..ফেডারেশন কাপের সেমী ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো দুই চীর প্রতিদ্বন্দি মোহামেডান ও আবাহনী..নির্ধারিত সময়ের তুমুল উত্তেজনাপূর্ন খেলাটি অভাবনীয় ভাবে ৪-৪ গোলে শেষ হলে ট্রাইব্রেকারে আবাহনী ৪-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে কাপ জয় করে নেয়….খেলার মাঝেই দুদলের খেলোয়াড় ও দর্শকদের মাঝে নানা কারনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে..শেষ মেষ দর্শকদের মারামারি এতটাই তুঙ্গে উঠে যে ষ্টেডিয়াম ও তার আশপাশ এলাকা এক রনক্ষেত্রে পরিনত হয়..ককটেল বিস্ফোরন প্রচুর ভাঙ্গচুর যেমন হয় তেমনি হতাহত ও প্রচুর..লন্কাকান্ড ঠেকাতে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলোনা..এঘটনায় অর্ধশতাদিক আহত হয়..বেশ কজনকে গ্রেফতার ও করা হয়..এমনকি ছুরির আঘাতে প্রানও হারাতে হয় গৌরাঙ্গ ও আনোয়ার নামের দুই যুবককে..যে কারনে খেলাটি ফুটবলের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে..
নির্ধারিত সময়ে ৮মিনিটেই লংকান প্রেমলালের গোলে আবাহনী এগিয়ে যায়..দর্শকদের গন্ডগোল তখনি শুরু..এরপর ৩৪-৪০-৫০ মিনিটে প্রথমে কায়সার ও পরে মনুর দুটো গোল মোহামেডানকে ৩-১ গোলে এগিয়ে রাখে..৫১মিনিটে প্রেমলাল আবারও গোল করেন তবে ৫৬ মিনিটে কায়সার তার দ্বিতীয় গোল করে ব্যাবধান ৪-২ করেন..এসময় আবাহনী সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠ গরম করে তোলেন..এক পর্যায়ে ঢিলের আঘাতে মাথা ফাটে আবাহনীর রির্জাভ খেলোয়াড় কাজলের..অতঃপর ৬৫ ও ৮০ মিনিটে প্রেমলাল ও আসলাম দুগোল করে ৪-৪ সমতা ফেরান..খেলায় দর্শকদের হাঙ্গামার কারনে প্রেমলালের হ্যাট্রিক আনন্দ আড়ালেই ঢেকে যায়..প্রেমলালের হ্যাট্রিক আসে পেনাল্টি থেকে..বিপদ সীমানায় বল পেয়ে আসলাম হেড করতে গেলে এমিলির সাথে ধাক্কা লাগে..তাতেই পেনাল্টির বাঁশী বাজান রেফারী খালেক..মোহামেডানের খেলোয়াড়রা জোর আপত্তি জানালেও রেফারী তা নাকচ করে দেন..আরেকবার রেফারী খালেককে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা আঘাত করলেও কোন কার্ড দেখানো হয়নি..অতপঃর ট্রাইব্রেকারে আবাহনীর প্রেমলাল-আসলাম-আশীষ ও রুপু গোল করলে ৪-১ গোলে জয়ী হয়ে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে উঠে যায় আবাহনী..মোহামেডানের একমাত্র কায়সার গোল করলেও এমিলি ও ইলিয়াস গোল করতে ব্যার্থ হন..জয় নিশ্চিত হওয়ার ফলে আর শর্ট নেয়ার প্রয়োজন হয়নি..এমিলি ও ইলিয়াসের শর্ট অনন্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়ে আবাহনীর বদলি গোলরক্ষক মামুন জয়ের নায়ক হয়ে ধরা দেন…..ফাইনালে আবাহনী ২-১ গোলে ব্রার্দাসকে হারিয়ে কাপ জয় করে নিয়েছিলো…আশীসের গোলে প্রথমেই এগিয়ে যায় আবাহনী তবে সমতা ফেরান ওয়াসিম…আসলামের সুযোগ সন্ধানী গোল আবাহনীকে চ্যাম্পিয়নের স্বাধ এনে দেয়…সেমী ফাইনালের রক্তক্ষয়ী হাঙ্গামার একমাস পর ফাইনাল খেলাটি অনুষ্টিত হয়েছিলো…
..এরপর লীগ আসরে সেই হারের ষোল আনা প্রতিশোধ নেয় মোহামেডান..দু দুবারের মুখোমখিতে জয়ের স্বাধ নিয়ে লীগ শিরোপাও ঘরে তুলে নেয় মোহামেডান..দুটো ম্যাচই ভাল ভাবে শেষ হয় কোন গোন্ডগোল ছাড়াই..তিন বছর পরই দেখা পায় মোহামেডান লীগ সাফল্যের..প্রথম দফায় বলা যায় ১-০ গোলের জয়টা আসে নাটকীয় ভাবেই..অতিরিক্ত সময়ের শেষক্ষনে বদলি খেলোয়াড় দলনায়ক বাদল গোলটি করেছিলেন..সুপার লীগে মোহামেডান জয়ের মুখ দেখেছিলো ২-০ গোলে..খেলার ৬ ও ২৪ মিনিটের মাথায় ইলিয়াস ও মনুর দুটো চমৎকার গোল মোহামেডানকে তিন বছর পর অপরাজিত থেকেই শিরোপার স্বাধ এনে দেয়..২২ ম্যাচের মাঝে ১৮ জয় পেয়েছিলো মোহামেডান..ড্র হয় চার খেলা..আবাহনী লীগের শেষ দিকে ভারত থেকে চিমা-কিপার ভাষ্কর ও মনোরন্জনকে দলে ভিড়িয়েও মোহামেডানকে হারাতে ব্যার্থ হয়..
mahfuz
Aug 30. 2014
১৯৮৬-র ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী দল..বাঁ হতে অশোকা-জনি-আশীষ-পাকির-বাবুল-রিপন-রুপু-প্রেমলাল-আসলাম-ইউসুফ… অশোকা hobena Chondrosiri hobe…
admin
Sep 21. 2014
tnx Fahfuz
মাহবুব
Sep 29. 2014
কিরন ভাই , আবাহনী – মোহামেডান ম্যাচ ১৯৮৩ সাল এবং ১৯৮৯/৯০ সালের লিগের খেলার ফলাফল জানাবেন কি ? ১৯৯১ সালের বি টি সি কাপের আবাহনী -মোহামেডান ফাইনাল খেলার ফলাফলটাও জানতে চাই । জানালে খুশি হব । আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম । ভাল থাকবেন ।
মাহবুব
Oct 19. 2014
আমি ১৯৮১ সাল এবং ১৯৮৫ সালের ফুটবল লীগের আবাহনী – মোহামেডান ম্যাচের ফলাফল জানতে চাই । কেউ তথ্য দিবেন কি ?